চট্টগ্রাম প্রতিনিধি |
অল্প বৃষ্টিতেই ডুবেছে নগরী। নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলাফল যেন গাল-গল্পেই সীমাবদ্ধ থাকছে। অনাবৃষ্টি বা অতিবৃষ্টি হলেই নগরীর অধিকাংশ অঞ্চলে পানি উঠে। খালে মাটি ফেলে তৈরিকৃত বাঁধ অপসারণ না করার কারণে জলাবদ্ধতা হচ্ছে বলে দাবি সিটি কর্পোরেশনের। অন্যদিকে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা দাবি করছে তারা সব বাঁধ সরিয়েছে। বরং সিটি কর্পোরেশন নালা পরিষ্কার না করায় পানি উঠছে। এমন অভিযোগের তীর ছোড়াছুঁড়ি পুরনো হলেও ভোগান্তির সব ধরনের মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। দুই সংস্থার সমন্বয় সভা হলেও তা কোনো ফলাফল আনার আগেই চায়ের কাপের ধোঁয়ার মতই উধাও হয়ে যাচ্ছে।
গতকাল মাত্র ২৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতেই নগরীতে জলজটের সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি শুরুর আধা ঘণ্টার মধ্যেই নগরীর বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। বৃষ্টি থামার এক থেকে দেড় ঘণ্টা পরও কোথাও গোড়ালি, কোথাও হাঁটুসমান পানি জমে যায়। এতে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় নগরবাসীকে।
গতকাল সকালের অল্প বৃষ্টিতেই নগরের মুরাদপুর, দুই নম্বর গেট, ষোলশহর, শুলকবহর, কাপাসগোলা, কাতালগঞ্জ, বহদ্দারহাট, আগ্রাবাদ সিডিএ, পাঠানটুলী এসব এলাকায় পানি জমে যায়। পানিতে রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়াতে জরুরি প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষদের পড়তে হয় ভোগান্তিতে। রাস্তা তলিয়ে যাওয়াতে গাড়ি চলাচলও কমে যায়। এতে দুর্ভোগ আরো বাড়ে।
মুরাদপুর এলাকার বাসিন্দা আবদুল গাফ্ফার বলেন, সকালে সামান্য বৃষ্টিতে পুরো এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। রাস্তায় হাঁটু সমান পানি জমে। আশপাশের এলাকায় ভিতরের রাস্তাগুলোতেও পানি উঠে। খালের মধ্যে বাঁধ থাকায় পানি দ্রæত রাস্তায় উঠে আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে। রাস্তায় গাড়ি চলাচল একেবারে সীমিত হয় পড়ে। বিভিন্ন প্রয়োজনে বের হওয়া মানুষজনকে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়।
এ নিয়ে চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক পূর্বদেশকে জানান, ‘সমন্বয় সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে বর্ষার আগেই খালের বাঁধ অপসারণ করার। সাধারণত মে মাসের দিকে বৃষ্টি হয়। এবারে তো আগেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আগামী মাসের মধ্যে বাঁধগুলো অপসারণ করা উচিত। খালের উপর যে পরিমাণ মাটি ফেলে কাজ করা হয়েছে, তা শুরু করলেও সরাতে অন্তত একমাস লাগবে।’
জলাবদ্ধতা নিরসনে গত পাঁচ বছর ধরে নগরে ১০ হাজার ৯২১ কোটি ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে পৃথক চারটি প্রকল্পের কাজ চলছে। এরপরও অল্প বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার মুখে পড়তে হচ্ছে নগরবাসীকে। পানিবন্দী হয়ে থাকতে হচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। শহরের অনেকগুলো খালের মধ্যে বাঁধ দেওয়ায় এমন দুর্ভোগ বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ।
যদিও সবগুলো খালের বাঁধ অপসারণ করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন জলাবদ্ধতা নিরসন মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল শাহ আলী।
তিনি বলেন, বৃষ্টিতে মুরাদপুর, দুই নম্বর গেট এলাকায় পানি উঠেছে। মুরাদপুরে আমাদের কাজের জন্য বাঁধ দেওয়া ছিল। বৃষ্টির সাথে সাথে সে বাঁধ অপসারণ করা হয়েছে। কাজের সুবিধার্থে কিছু খালের মধ্যে অস্থায়ী বাঁধ দেওয়া হয়েছিল, সেগুলো সব অপসারণ করা হয়েছে। এখন আর কোনো বাঁধ নেই। অন্যান্য জায়গায় পানি উঠলে সেখানে নালা বা অন্য কোনো প্রতিবন্ধকতার কারণে উঠতে পারে। আমাদের সব বাঁধ অপসারণ হয়ে গেছে।
এক প্রশ্নের জবাবে লে. কর্নেল শাহ আলী বলেন, আমাদের সবগুলো ¯øুইস গেট স্থাপন হয়ে গেছে। আমরা এগুলো কার্যকর করেছি। আমাবস্যা বা পূর্ণিমাতে জোয়ারের উচ্চতা বেশি হয়। এখন জোয়ারের পানি আর শহরে প্রবেশ করতে পারবে না। পাম্পগুলো আমরা এখনো বসাতে পারিনি। দুই তিন সপ্তাহের মধ্যে পাম্পও বসে যাবে। তখন পানি বেশি হলে টেনে নেয়া যাবে।
জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্পের কাজের সুবিধার্থে খালে বাঁধ দেয়া হয়েছিল। অস্থায়ী বাঁধের কারণে বৃষ্টি ছাড়াও কিছু এলাকায় পানি উঠতে থাকে। মূলত এ বাঁধের কারণেই পানির স্বাভাবিক চলাচলে বিঘœ ঘটায় এবং পানি জমে ভোগান্তি বাড়ায় এসব এলাকায়। পানি যেতে না পেরে আটকে থাকে। যার কারণে অল্প বৃষ্টিতেই সেসব এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। অবশ্য বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছিলেন চসিকের একাধিক কাউন্সিলর। সম্প্রতি চসিকের সাধারণ সভায় কাউন্সিলররা সিডিএ’কে দোষারোপ করে এ ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
সর্বশেষ গত ১৫ মার্চ সিটি মেয়র ও সিডিএ চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে জলাবদ্ধতা নিরসন সংক্রান্ত একটি সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ৩১ মার্চের মধ্যে বিভিন্ন খালে থাকা বাঁধগুলো অপসারণ করা হবে। কিন্তু নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে গেলেও থেকে যায় বাঁধ। যার কারণে গতকাল শনিবারের অল্পবৃষ্টিতে দুর্ভোগ পোহাতে হয় নগরবাসীকে।
এদিকে আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, শনিবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ২৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।