চট্টগ্রাম প্রতিনিধি |
জনস্বাস্থ্য ও নগরস্বাস্থ্য নিয়ে একগুচ্ছ ভাবনা ও পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। গতকাল শনিবার সকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে জেলা প্রশাসন ও জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের আয়োজনে অসুস্থদের মাঝে চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের জন্য একটি ১০০ বেডের স্পেশালাইজড ক্যান্সার ভবন এবং সেটার জন্য জনবলও দিয়েছেন। ইতোমধ্যে চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। সেটা হয়ে গেলে ঢাকায় বিশেষায়িত ক্যান্সার প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে সেসব চিকিৎসার সুযোগ চট্টগ্রামে নিয়ে আসতে পারব। তাছাড়া চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল নামে দুটি সরকারি প্রতিষ্ঠান আমাদের আছে। সেখানে যদি ক্যাপাসিটি বাড়াতে পারি তাহলে সেবার ব্যাপ্তি আরও বাড়বে। নতুন করে প্রতিষ্ঠান করতে গেলে নতুন অর্গানোগ্রাম, জনবল, নতুন ক্যাম্পাস তৈরি করতে হয়।’
চট্টগ্রামে ক্যান্সার ও হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার হার বেশি জানিয়ে নওফেল বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সেদিন আমাকে বলছিলেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার অঞ্চলে অতিমাত্রায় শুঁটকি খাওয়ার একটা প্রবণতা আছে। এতে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। এত বেশি খাওয়া হয় যে বাংলাদেশে শুঁটকি ইমপোর্ট করে আনতে হয়। বাংলাদেশে শুঁটকির ৭০ শতাংশ ইমপোর্ট করা হয়। হৃদরোগ এবং কিডনির জন্য অতিরিক্ত রেড মিটও একটা ঝুঁকি তৈরি করে।’
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, প্রতিবছর দেশে প্রায় ৩ লাখ মানুষ ক্যান্সার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকে প্যারালাইজড, জন্মগত হৃদরোগ ও থ্যালাসেমিয়ায় মৃত্যুবরণ করে। অর্থের অভাবে এসব রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসা ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি তাদের পরিবারও চিকিৎসার ব্যয় বহন করে নিঃস্ব হয়ে পড়ে।
অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজ সংলগ্ন ‘চিটাগাং শিশু পার্ক’ সরাতে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেবেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
তিনি বলেন, ‘আমরা সিটি কর্পোরেশনের কাছে আহবান জানাব এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমি চিঠি দিব। প্রতিরক্ষা সচিবের কাছে চিঠি দিব। এই বিষফোঁড়াকে দয়া করে এখান থেকে সরাতে হবে।’
নগরীর বাসিন্দাদের সুস্বাস্থ্যের জন্য হাঁটাচলা করার মত উন্মুক্ত স্থানের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে নওফেল বলেন, ‘সার্কিট হাউজের পাশে বিষফোঁড়ার মত শিশু পার্ক নামে একটা অবৈধ ব্যবসা পরিচালিত করা হচ্ছে। মাত্র ১২ হাজার টাকা মাসে সিটি কর্পোরেশন সেখানে পায়। আমরা খবর নিয়ে দেখলাম। চিঠির পর চিঠি দিচ্ছি। কিন্তু কোনো কিছুই হচ্ছে না। ১২ হাজার টাকা দিয়ে এত বড় একটা জায়গা!’
এর আগে ২০২১ সালের ৯ মে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি, স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব এবং চট্টগ্রামের মেয়রকে চিঠি দিয়ে ওই শিশু পার্কটির ইজারা বাতিলে অনুরোধ জানিয়েছিলেন নওফেল।
তিনি বলেন, ‘সেটা সিটি কর্পোরেশনের জায়গা না, সেটা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের জায়গা। সিটি কর্পোরেশনকে দেওয়া হয়েছিল জনসাধারণের জন্য পার্ক করতে। সেটা বানিয়েছে শিশু পার্ক, দরজা-টরজা বন্ধ করে দিয়ে সেখানে ব্যবসা করছে। জনসাধারণের পার্কটা ধ্বংস করে দিয়ে সেখানে জনগণের প্রতিমাসে যে ১০০ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে, এটার ক্ষতিপূরণটা কে দিবে?’
শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী সিআরবিতে হাসপাতাল না করার বিষয়ে আমাদের সাধারণ মানুষের যে আবেগ, সেটাকে বিবেচনা করে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। নগরীতে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ থাকা খুব দরকার।’
পরে প্রধান অতিথি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের ক্যান্সার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকে প্যারালাইজড, জন্মগত হৃদরোগ, থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত চট্টগ্রাম নগরীর ৯০ জন রোগীর প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে ৪৫ লাখ টাকার চেক বিতরণ করেন।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিভাগীয় সমাজসেবা কার্যালয়ের পরিচালক কাজী নাজিমুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রাকিব হাসান, নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) মো. তৌহিদুল ইসলাম, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. ফরিদুল আলমসহ প্রমুখ।