মো. নুুরুল করিম আরমান |
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ফিজিক্যাল এডুকেশন এন্ড স্পোর্টস সায়েন্স ডিপার্টমেন্টের পড়াশোনা শেষ করে নিজ বিভাগেই প্রভাষক পদে নিয়োগ পেয়েছেন শরিফুল ইসলাম। যেখান থেকে পড়াশোনা শেষ করেছেন সেখানেই শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়ে উচ্ছ্বসিত চবি’র এ ছাত্র। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন আদর্শ শিক্ষক হওয়ার। শরিফুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি বান্দরবান জেলার লামা উপজেলার সদর ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি বলিয়ারচর গ্রামে। তার বাবা শফিকুল ইসলাম একজন সামান্য গ্রামীণ দোকানদার, মা জান্নাত আরা বেগম গৃহীনি। পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে শরিফুল ইসলাম দ্বিতীয়। তাছাড়া তিনি উপজেলার সরই ইউনিয়নে বোধিছড়াস্থ কোয়ান্টাম কসমো স্কুল ও কলেজ’র কৃতি শিক্ষার্থী ছিলেন। এ অর্জনের মধ্য দিয়ে কোয়ান্টাম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য নতুন আরেকটি মাইলফলক রচনা করলেন শরিফুল ইসলাম।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৩ সালে বাবার হাত ধরে মাত্র পাঁচ বছর বয়সে কোয়ান্টাম শিশুকাননে ভর্তি হন শরিফুল ইসলাম। ২০১৩ সালে কোয়ান্টাম কসমো স্কুল থেকে এসএসসি, ২০১৫ সালে কোয়ান্টাম কসমো কলেজ থেকে এইচএসসি সম্পন্ন করেন। এরপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৫-১৬ সেশনে ফিজিক্যাল এডুকেশন এন্ড স্পোর্টস সায়েন্স ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হন শরিফুল ইসলাম। অনার্সে তিনি তার বিভাগে ফার্স্ট ক্লাস থার্ড এবং মাস্টার্স হন ফার্স্ট ক্লাস ফাস্ট হন। রবিবার (৫ অক্টোবর) চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে নিয়োগ প্রদান করেন।
শরিফুল ইসলাম চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের প্রভাষক পদে নিয়োগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে কোয়ান্টাম কসমো কলেজ’র অধ্যক্ষ ছালেহ আহমেদ বলেন, স্কুলজীবন থেকেই শরিফুল ইসলাম পড়ালেখায় বেশ মনোযোগি ছিলেন, সব ক্লাশ পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করত। এর পাশাপাশি তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন কোয়ান্টামের সেবামূলক কাজে। করোনাকালে দায়িত্ব পালন করেন কোয়ান্টাম স্বেচ্ছা দাফন টিমের একজন সক্রিয় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে। কোয়ান্টাম কসমো স্কুল ও কলেজে খো খো নামের একটি খেলার পথচলা শুরু হয় শরিফুল ইসলাম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের নিয়ে। ২০০৯ সালে এ খেলায় তার দল প্রথমবারের মতো অর্জন করে জাতীয় পদক। এ অর্জনের মধ্য দিয়ে শরিফুল ইসলাম দেখিয়ে দিয়েছেন, কিভাবে ছোট থেকে বড় হতে হয়। আর ইচ্ছে থাকলেই ‘সব সম্ভব’।
কোয়ান্টাম কর্তৃপক্ষের কাছে কৃতজ্ঞা প্রকাশ করে চবি’র নবাগত প্রভাষক শরিফুল ইসলামের বাবা শফিকুল ইসলাম জানান, এ অর্জন আমার ছেলে শরিফুল ইসলামের নয়, এ অর্জন কোয়ান্টাম কর্তৃপক্ষের। আমরা চিরকৃতজ্ঞ কোয়ান্টাম কর্তৃপক্ষের কাছে।
নিজ বিশ^বিদ্যালয়ের নিজ বিভাগের পড়াশোনা শেষ করে নিজ বিভাগেই নিয়োগ পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে শরিফুল ইসলাম বলেন, আমি একজন আদর্শ শিক্ষিকা হতে চাই। শিক্ষার্থীদের মাঝে নিজের অর্জিত জ্ঞানের সর্বোচ্চ প্রয়োগ করার চেষ্টা করবো। সুযোগ পেলে পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের শিক্ষকতার পদার্পন রাখতে চাই। তিনি বলেন, বিষয়টি আমার কাছে অতি আনন্দের। নিজের ক্যাম্পাসে এবং নিজের ডিপার্টমেন্টে কর্মজীবন শুরু করতে পারায় কাজটা আমার জন্য সহজ হবে। আমার ডিপার্টমেন্টের সমস্যা-সম্ভাবনাগুলো আমার জানা আছে। আমি এগুলো নিয়ে কাজ শুরু করবো। আমার এ সাফল্যের জন্য বাবা-মাসহ বিশেষ করে কোয়ান্টাম কসমো স্কুল ও কলেজ শিক্ষক-কর্তৃপক্ষের কাছে চিরকৃতজ্ঞ। তারা আমাকে উপর্যুক্ত র্শিক্ষা আর যতœ না করলে হয়ত এতটুকু পৌঁছতে পারতাম না।
শুধু তায় নয়, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত 'সব সম্ভব' বইয়ে শত তরুণের জীবন জয়ের গল্পের একটি কোয়ান্টা শরিফুল ইসলামকে নিয়ে। এতে শরিফুল লিখেছেন, 'কোয়ান্টাম আমাকে শিখিয়েছে-সব সম্ভব। আমার সবচেয়ে বড় শিক্ষা যদি বলতে হয় তা হলো, এখানে আমি জীবনযাপনের ব্যাকরণ ও একটি শুদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গির সন্ধান পেয়েছি।' বিস্তারিত পড়ুন-কোয়ান্টাম আমাকে শিখিয়েছে 'সব সম্ভব'।
অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন শরিফুল খেলাধুলার ওপর বই লেখেন-'খো খো খেলার আদ্যোপান্ত' (২০২১)। এই খেলার ওপর বাংলা ভাষায় রচিত আধুনিক নিয়মকানুন সম্বলিত এটিই পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ। এরপর আরো লেখেন 'ওয়ার্ম আপ স্ট্রেচিং ও কুল ডাউন' (২০২৩), 'পিটি ও ড্রিল' (২০২৪) এবং 'প্যারেড' (২০২৫) বইসমূহ। তার সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা দুটি 'অদম্য' ও 'সব সম্ভব'। এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সাময়িকী জার্নাল অব বায়োমেড রিসার্চ-এ তার লেখা একটি গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে বলেও জানান কোয়ান্টাম কসমো কলেজ’র অধ্যক্ষ ছালেহ আহমেদ।
প্রধান সম্পাদক : বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রিয়দর্শী বড়ুয়া, প্রকাশক : প্রদীপ কান্তি দাশ, সম্পাদক : মো. নুরুল করিম আরমান, আইন বিষয়ক উপদেষ্ঠা : এ্যডভোকেট ফয়সাল আজিজ।
সম্পাদকীয় কার্ষালয় : প্রেসক্লাব ভবন (দ্বিতীয় তলা), প্রধান সড়ক, লামা পৌরসভা, বান্দরবান
ই-মেইল paharerkatha@gmail.com, মোবাইল: ০১৭৫০৪৪৪৯৯৬/০১৮১৪৮৪৫০৭৩
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত