মাসুদ নাসির, রাঙ্গুনিয়া |
রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পারুয়া ইউনিয়নের জঙ্গল পারুয়া এলাকার কয়েক সহস্রাধিক বাসিন্দা সড়ক যোগাযোগের অভাবে মানবেতর দিন অতিবাহিত করছিল। অসুস্থ হলে রোগীদের দোলনায় করে কাঁধে চড়িয়ে নিতে হতো। মাইলের পর মাইল হেঁটে খালের উপর ঝুঁকিপূর্ণ কয়েকটি বাঁশের সাঁকো পেরিয়ে চলাচল করত এতদ অঞ্চলের বাসিন্দারা। এতে মৌলিক অধিকার প্রাপ্তিসহ সার্বিক দিক দিয়ে পিছিয়ে ছিল রাঙ্গুনিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকার এই বাসিন্দারা। তবে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের বিশেষ উদ্যোগে পিছিয়ে পড়া এই জনগোষ্ঠির ভাগ্যের উন্নয়ন হতে যাচ্ছে। এলজিইডি’র মাধ্যমে রাঙ্গুনিয়ার পারুয়া ডিসি সড়ক থেকে কাউখালীর সোনাইছড়ি বাজার পর্যন্ত বিকল্প সড়ক যোগাযোগ করার কাজ চলছে। এটি সম্পূর্ণ হলে রাঙ্গুনিয়া থেকে কাউখালী সড়ক হয়ে গুয়াতল এলাকা দিয়ে চট্টগ্রাম কিংবা রাঙামাটি যাওয়ার বিকল্প সড়ক যোগাযোগ মাধ্যম সৃষ্টি হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এতে বদলে যাবে এতদ অঞ্চলের বাসিন্দাদের জীবনমান। পারুয়া ইউপি চেয়ারম্যান একতেহার হোসেন জানান, রাঙ্গুনিয়ার অন্যান্য জনপদের ন্যায় পারুয়া ইউনিয়নেও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের হাত ধরে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ চলছে। এর ধারাবাহিকতায় পারুয়া ইউনিয়নের ৫-৮ নং ওয়ার্ড এলাকার বাসিন্দাদের জন্য নতুন সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এটি পারুয়া ডিসি সড়কের সুবেদার মসজিদ থেকে জাহেদ চেয়ারম্যান বাড়ির পাশ দিয়ে মধ্য পারুয়া নিজাম আউলিয়া মাজার হয়ে জঙ্গল পারুয়া দিয়ে কাউখালী সোনাইছড়ি বাজারের সাথে সংযোগ স্থাপন করছে। প্রায় ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কটির ইতিমধ্যেই পারুয়া ডিসি সড়ক থেকে চার কিলোমিটার অংশ কার্পেটিং করার কাজ চলমান রয়েছে। বাকি অংশ এইচবিপি দ্বারা উন্নয়নে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এছাড়া রাঙ্গুনিয়ার সীমান্তবর্তী জঙ্গল পারুয়া এলাকার সাথে বেতবুনিয়া উপজেলার সোনাইছড়ির সাথে প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে একটি ব্রিজ নির্মাণ কাজ দ্রæত গতিতে এগিয়ে চলেছে। এটি সম্পূর্ণ হলে এতদাঞ্চলের বাসিন্দাদের জীবন মানে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাঙ্গুনিয়ার সাথে কাউখালীর বিকল্প সড়ক যোগাযোগ স্থাপনে দুই উপজেলা সীমান্তের সোনাইছড়ি খালের উপর ব্রিজ নির্মাণ কাজ করা হচ্ছে। বর্তমানে ব্রিজটির বেইজ ঢালাইয়ের কাজ চলছে। এদিন কাজ পরিদর্শন করেন উপজেলা প্রকৌশলী মো. দিদারুল আলম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পারুয়া ইউপি চেয়ারম্যান একতেহার হোসেন, প্রকল্পের পরামর্শক প্রকৌশলী রাজীব দাশ গুপ্ত ও স্থানীয় জনসাধারণ।
উপজেলা প্রকৌশলী মো. দিদারুল আলম জানান, তথ্যমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী এতদ অঞ্চলের বাসিন্দাদের জীবন মান উন্নয়নে এই সড়কটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) মাধ্যমে করা হচ্ছে।
এই সড়কের শেষ প্রান্তে এলজিইডি’র প্রোগ্রাম ফর সাপোর্টিং রুরাল ব্রিজেস প্রজেক্টের আওতায় ২৬ মিটার দীর্ঘ একটি পিএসসি গার্ডার নতুন ক্যাটাগরির ব্রিজ করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের যৌথ অর্থায়নে ২ কোটি ২৩ লাখ ৮৯ হাজার ২৮৬ টাকা চুক্তিমূল্যে ব্রিজটি করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
তথ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে স্থানীয় কৃষক আইয়ুব আলী জানান, দুর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে তারা অনেকাংশে পিছিয়ে রয়েছেন। শিক্ষা, চিকিৎসা থেকে শুরু করে দুর্গম যোগাযোগের কারণে কৃষি কাজেও তাদের নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয়। তবে সড়ক যোগাযোগ করে এতদ অঞ্চলের বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি রোধ করার জন্য তথ্যমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। সড়কটি সম্পূর্ণ হলে এতদ অঞ্চলের যোগাযোগে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে। পিছিয়ে পড়া ওই এলাকার পাহাড়ি বাঙালির জীবন জীবিকার আমূল পরিবর্তন হবে।