মাসুদ নাসির, রাঙ্গুনিয়া |
উত্তর চট্টগ্রামের যোগাযোগের অন্যতম প্রধান মাধ্যম চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক। এই সড়কের রাঙ্গুনিয়া অংশের ভোবানিমিল থেকে পূর্বে কাপ্তাই পর্যন্ত ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪০ মিলি ডেন্স কার্পেটিং দ্বারা সংস্কার কাজ অব্যাহত রয়েছে। তবে সড়কটির সংস্কার কাজ করা হলেও কোথাও রাখা হয়নি ড্রেনেজ ব্যবস্থা। এতে সড়কজুড়ে খানাখন্দ রোধ হলেও থেকে গেছে ব্যাপক জলাবদ্ধতা।
গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে কাপ্তাই সড়কের শুধুমাত্র রাঙ্গুনিয়া অংশে অন্তত ২০টি স্পটে হাঁটু সমান জলকাদায় একাকার হয়ে যায়। কাদামাটি মিশ্রিত পিচ্ছিল সড়কে প্রায়শই আটকে যাচ্ছে যানবাহন। ফলে দুই পাশে দীর্ঘ যানজট লেগে তীব্র ভোগান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া দ্রæতগতির ভারী যানবাহন যেকোনো সময় এসব কাদাপানিতে উল্টে গিয়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা জানান, চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের ৩৫ কিলোমিটার সড়কের রাঙ্গুনিয়ার লিচুবাগান, রোয়াজারহাট, ইছাখালী, গোডাউনের কয়েকটি স্পট, আজিজনগর, ভোবানিমিল, গোচরা, শান্তিরহাট, সত্যপীর দরগাহ, তাপবিদ্যুৎ এলাকাসহ অল্প বৃষ্টিতেই পানির ঢল নামে। পাশের পাহাড় থেকে মাটি নেমে কাদার সৃষ্টি হয়। এতে যানবাহন আটকে গিয়ে দীর্ঘ ভোগান্তিতে পড়েন যাতায়াতকারীরা। সড়কটি বার বার সংস্কার করা হয়। কিন্তু কোথাও করা হয় না ড্রেনেজ ব্যবস্থা। এতে বছরের পর বছর সড়কের এই পরিস্থিতি চলে এলেও স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। শুধুমাত্র বৃষ্টি এলেই সড়কের কাদামাটি অপসারণ করেই দায় সারেন তারা। এতে ক্ষোভ বাড়ছে যাত্রী ও যানবাহন চালকদের মাঝে। সরেজমিনে দেখা যায়, সামান্য বৃষ্টি হলে গোডাউন কাদের নগর থেকে নোয়াগাঁও এলাকা পর্যন্ত সড়কে পানির ঢল নামে। আবার গোডাউনের আজিজ নগর এলাকায় দুই পাশের পাহাড় থেকে মাটি নেমে সড়কে জলকাদায় পরিণত হয়।এতে বেশ কয়েকটি সিএনজি অটোরিকশা আটকে গিয়ে কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট লেগে যায়। স্থানীয়দের সহায়তায় আটকে পড়া গাড়ি সরিয়ে নিতেই আটকে যায় আরেকটি গাড়ি। ফলে সামান্য ১০ মিনিটের পথটি পাড়ি দিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে দেখা গেছে যাত্রী ও চালকদের। এসময় সওজ কর্তৃপক্ষ বুলডোজারের সাহায্যে কয়েকদিন ধরে সড়ক থেকে মাটি অপসারণ করার কাজ করলেও এক বৃষ্টিতেই তা আবার একই অবস্থা হচ্ছে বলে জানান চলাচলকারীরা।
চন্দ্রঘোনা সিএনজি চালক সমবায় সমিতির সভাপতি মো. এয়াকুব আলী জানান, সামান্য বৃষ্টিতে কাপ্তাই সড়কের জলাবদ্ধতা শুধু গোডাউন এলাকাতেই নয়, সড়কের তাপবিদ্যুৎ গেট থেকে সত্যপীর মাজার, সৌদিয়া প্রজেক্ট এলাকা, গোচরা, নোয়াগাঁও, ইছাখালী, লিচুবাগান পৌরসভা কার্যালয় থেকে পূর্বদিকে পল্লী বিদ্যুৎ অফিস পর্যন্ত সড়কের বিভিন্ন স্পটে এই সমস্যা রয়েছে। তবে গোডাউন এলাকায় এই জলাবদ্ধতার সমস্যাটি খুবই প্রকট।
গোডাউন এলাকার ব্যবসায়ী মো. আবু জাফর বলেন, কাপ্তাই সড়কের গোডাউন এলাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই পানির ঢল নামে। পাশের পাহাড় থেকে এই পানির ঢলের সাথে নেমে আসে কাদা। ড্রেনেজ সমস্যার কারণে এই সমস্যা চলে আসছে। সড়কটি সংস্কার করা হলেও দীর্ঘদিনেও এই সমস্যার সমাধানে কোনো উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্টরা।
মো. ইউনুস নামে এক চালক বলেন, কাপ্তাই সড়কের এই দুর্ভোগ দীর্ঘদিনের। এখানে সারাবছর ধরে সড়কের পাশের গাছ ধসে পড়ে। সংস্কারের ফলে খানাখন্দ রোধ হলেও ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় যে লাউ সেই কদু অবস্থাই থেকে গেছে।
চন্দ্রঘোনা লিচুবাগান ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. হারুন সওদাগর জানান, লিচুবাগান পেট্রোল ফার্মের কাপ্তাই সড়কের বিস্তীর্ণ অংশে বড় বড় গর্তে পানি জমে পুকুরে পরিণত হয়েছে। জল কাদার গর্তে সড়কে চলাচলের নানা যানবাহন আটকে ও উল্টে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। সামান্য বৃষ্টি হলে যানবাহন আটকা পড়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি করে। যাত্রীবাহী যানবাহন মারাত্মক ঝুঁকির মাঝে এ অংশে গাড়ি চালাতে হচ্ছে। সড়কের এসব গর্ত ভরাট না করলে ভয়াবহ দুর্ঘটনার আশংকা দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের ওয়ার্ক সুপারভাইজার রাসেল দেওয়ান বলেন, ভারী বৃষ্টি হলেই সড়কের গোডাউনসহ কিছু কিছু এলাকায় পানি জমে যায়। তবে কিছুক্ষণ পর আবার চলেও যায়। এ কারণে সাময়িক জনদুর্ভোগ হয়। সড়কে কাদার আস্তরণ পড়লেও আমাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় তা পরিষ্কার করে দেয়া হয়। তবে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে ড্রেনেজ ব্যবস্থার জন্য ইতোমধ্যেই পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।