পার্বত্য অঞ্চলে মূলত চার শ্রেণির বন রয়েছে। সংরক্ষিত, রক্ষিত, ব্যক্তিমালিকানাধীন ও অশ্রেণিভুক্ত। এর মধ্যে অধিকাংশ সংরক্ষিত ও অশ্রেণিভুক্ত বন নির্বিচারে উজাড়ের হিড়িক পড়েছে। বন বিভাগের বিশেষ নজরদারিতেও থামছে না বনখেকোদের দৌরাত্ম্য।
পাহাড় থেকে গাছ কেটে নেয়া হয় ইটভাটা, তামাক চুল্লি ও করাতকলসহ বিভিন্ন জায়গায়। সাধারণত পার্বত্য চট্টগ্রামে গাছ কাটতে হলে সরকারিভাবে অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু নজরদারি ও তদারকির অভাবে বিনা অনুমতিতে বনের গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে বনখেকোরা।
সম্প্রতি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ওপর বন বিভাগ বিশেষ নজরদারি বাড়ালেও একেবারেই অরক্ষিত অশ্রেণিভুক্ত বনাঞ্চল। এসব বনাঞ্চল নিয়ে এখনো কোনো জরিপ হয়নি। এসব পাহাড়ের খাসজমিতে প্রাকৃতিকভাবে যে বনাঞ্চল গড়ে ওঠে তা অশ্রেণিভুক্ত বনাঞ্চলের আওতাভুক্ত।
পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৯ উপজেলায় গড়ে উঠেছে অন্তত ৩৬টি ইটের ভাটা। এর একটিরও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। প্রতিবছর জেলায় অক্টোবর মাসে ইটভাটাগুলোর কাজ শুরু হয় এবং তা চলে মে-জুন পর্যন্ত। বৃষ্টির আগ পর্যন্ত প্রত্যেকটি ইটভাটায় ১২-১৩ রাউন্ড ইট পোড়ানো হয়। প্রত্যেক রাউন্ডে সাত-আট লাখ ইট পোড়ে। আর প্রত্যেক ইটভাটায় বছরে গড়ে এক কোটি ইট তৈরি হয়। জেলার সব ভাটায় বছরে প্রায় ৩৬ কোটি ইট তৈরি হয়, এর বাজারমূল্য প্রায় ২৫২ থেকে ৩২৪ কোটি টাকা (প্রতি হাজার গড়ে ৭-৯ হাজার টাকা দরে)।
ইটভাটার কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি রাউন্ড ইট পোড়াতে প্রায় ৮-৯ হাজার মণ জ্বালানি কাঠ লাগে এবং এক মৌসুমে একটি ইটভাটায় গড়ে কাঠ পোড়ে প্রায় এক লাখ মণ। সে হিসাবে ৩৬ ইটভাটায় বছরে কমপক্ষে ৩৬ লাখ মণ কাঠ পুড়ছে।
এ ছাড়া জেলার আনাচকানাচে গড়ে উঠেছে দুই শতাধিক করাতকল। যার অর্ধেকেরই বন বিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। এসব অবৈধ করাতকলের মালিকানায় রয়েছেন স্থানীয় রাজনৈতিক ও আঞ্চলিক দলের প্রভাবশালী নেতারা।
বন ও পরিবেশ আইন অনুযায়ী সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে করাতকল স্থাপনের কোনো নিয়ম না থাকলেও এসবের তোয়াক্কা করে না বনখেকোরা। সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘিরেই অবৈধভাবে করাতকল স্থাপন করে দিনরাতে কাটা হচ্ছে সংরক্ষিত বনের কাঠ।