ইকবাল ফারুক, চকরিয়া |
পাহাড়ি বন্যায় ক্ষত বিক্ষত চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন রাস্তাঘাটের অবকাঠামো উন্নয়নে পাল্টে গেছে গ্রামীণ জনপদ। প্রতিবছর বন্যায় গ্রামীণ জনপদের রাস্তাঘাট সেতু-কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এলাকার হাজার হাজার মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। বর্তমান সরকারের গ্রামীণ অবকাঠানো রক্ষণাবেক্ষণ উন্নয়ন, পুণঃনির্মাণ ও সংস্কারের লক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, কাবিটা কর্মসূচীর আওতায় সড়কের কাজ বাস্তবায়ন হয়েছে। এ নিয়ে এলাকার জনসাধারণের সুযোগ সুবিধার পাশাপাশি আলোকিত হচ্ছে এই ইউনিয়ন।
চকরিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ভয়াবহ বন্যায় চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডের রাস্তাঘাট, কালভার্ট ও স্কুল মাদ্রাসার ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দীর্ঘদিন ধরে অর্থের অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোর মেরামত করা সম্ভব হয়নি।
সড়ক মেরামত না হওয়ায় স্থানীয় এলাকাবাসী ঠিকমতো। হাঁটাচলা করতে পারেনি। ফাঁসিয়াখালীর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত একটি সড়কের মেরামত কাজ ও একটি সড়কের গাইডওয়াল নির্মাণের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে বিশেষ প্রকল্পের আওতায় কাবিটা কর্মসূচির আওতায় ১ কোটি ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ প্রদান করেন।
জানা যায়, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের ছড়ারকুল ইছহাক মৌলভীর বাড়ি হতে কুলাল পাড়া পর্যন্ত রাস্তার পূনঃনির্মাণ, দক্ষিণ ছড়ারকুল ঝড়ঝড়ি ব্রিজ হতে ওয়াজ উদ্দিনের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা পুণনির্মাণ, ৯নং ওয়ার্ড দক্ষিণ ছড়ারকুল ফরিদের দোকানের কাছে ৪০মিটার, ৯নং ওয়ার্ড ছড়ারকুল ইছহাক মৌলভীর বাড়ি সংলগ্ন ৪০মিটার, ৮নং ওয়ার্ড কাচারিপাড়া আনোয়ার হোছনের বাড়ি সংলগ্ন ৪০মিটার গাইড ওয়াল নির্মাণ করতে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী এলাকা পরিদর্শন করেন। পরে যাচাই বাছাই করে প্রকল্পের অনুমোদন দেন। এই প্রকল্পের জন্য গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর ১ কোটি ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেন। তার মধ্যে মাটির রাস্তার কাজের জন্য ৫৩,৯৯,১৯৯ টাকা এবং বিগত বন্যায় রাস্তার ক্ষতিগ্রস্ত অংশে গাইড ওয়াল নির্মাণের জন্য ৫৬,০০,৮০১ টাকা বরাদ্দ করা হয়। বরাদ্দ পেয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কঠোর তদারকিতে প্রকল্পের কাজ দ্রæত সময়ের মধ্যে শতভাগ সম্পন্ন করা হয়েছে। মাটির রাস্তার কাজ সম্পন্ন হয়েছে ২১০০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং গাইড ওয়ালের কাজ সম্পন্ন হয়েছে ১৭০ মিটার দৈর্ঘ্য।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসির সার্বিক সহযোগিতায় ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের রাস্তা-ঘাট, গাইড ওয়াল নির্মাণ ও ব্যাপক উন্নয়ন বাস্তবায়নে গ্রামীণ জনপদের দৃশ্যপট বদলে গেছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পর যেসব রাস্তায় পা বাড়ানোই ছিল দুঃস্বপ্ন, সেখানে মেরামতের পর এখন আবারো ছুটে চলছে ভ্যানসহ ছোট ছোট সবধরনের যানবাহন। যাতায়াতের ক্ষেত্রে এসেছে আমূল পরিবর্তন। রাস্তা সংস্কারের ফলেও পাল্টে যাচ্ছে গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা ও জীবনযাত্রার মান। সরেজমিনে ফাঁসিয়াখালীর বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাস্তবায়ন করা প্রকল্পগুলো ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়মিত নজরদারির মাধ্যমে এসব উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন হওয়ায় বদলে যেতে শুরু করেছে এলাকাবাসীর জীবন-জীবিকার মান। জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসনের আন্তরিকতায় এই এলাকার রাস্তাঘাট ও গাইড ওয়াল নির্মাণ করায় সুফল পাচ্ছেন জনসাধারণের পাশাপাশি ও স্থানীয় কৃষকরা। কৃষকের উৎপাদিত শীতকালীন সবজি দ্রæত সময়ের মধ্যে বাজারে নিতে পারছে। কৃষিপণ্য বিক্রি করে উচ্চ মূল্য পাচ্ছেন বলেও জানান একাধিক কৃষক। এছাড়াও স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহজেই যাতায়াত করতে পারছে। ফলে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের অর্ধ লক্ষ মানুষের জীবন মান বদলে যাচ্ছে।
দক্ষিণ ছড়ারকূলের বাসিন্দা শাহাজাহান ড্রাইভার জানান, তার এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাটি সংস্কারের অভাবে হাঁটাচলা কঠিন ছিল। বর্ষার মধ্যে আরও বেশি সমস্যা ছিলো।
এখন রাস্তাটি মেরামত হওয়াতে দ্রæত সময়ে যোগাযোগ করতে পারছি।
স্থানীয় ছড়ারকুলের বাসিন্দা কবিরাজ নাজেম উদ্দীন, ভাঙ্গারপাড়ার বাসিন্দা নুরল আবছার ও ফরিদুল আলম জানান, গতবছর বন্যার কারণে রাস্তাঘাটগুলো সম্পূর্ণভাবে ভেঙ্গে গিয়েছিলো। এলাকার জনগণ রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। স¤প্রতি রাস্তাটি মেরামতের কারণে সকলের জীবনযাত্রা মান পরিবর্তন হয়েছে। এলাকার ছেলেমেয়েদের স্কুলে যাতায়াতও নিশ্চিত হয়েছে।
ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন হেলালী জানান, গতবছর ভয়াবহ বন্যায় তার ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডের রাস্তাঘাটগুলো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সাধারণ মানুষের যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাগুলো সংস্কার করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার নজরদারিতে যেভাবে রাস্তা উন্নয়ন কাজ হচ্ছে, সেটা অব্যাহত থাকলে দ্রæত লাঘব হবে গ্রামীণ দুর্ভোগ। আর গ্রামীণ অর্থনীতিতে আসবে আমূল পরিবর্তন। জনগণের জীবন-মান উন্নয়নে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
চকরিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসনাত সরকার বলেন, গতবছর বন্যায় ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে রাস্তাগুলো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাগুলো সংস্কার করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দের জন্য চাহিদা পাঠানো হয়। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে কাবিটা কর্মসূচীর আওতায় ১ কোটি ১০ দশ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। বরাদ্দের বিপরীতে উপজেলা প্রশাসনের কঠোর তদারকিতে রাস্তাঘাট মেরামত ও গাইড ওয়াল নির্মাণের কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করা হয়।