চট্টগ্রামে এবার কোরবানি পশুর চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। চার লাখ কোরবানির কাঁচা চামড়া সংগ্রহের প্রস্তুতি থাকলেও রোববার (২ জুলাই) পর্যন্ত প্রায় ৩ লাখ ২০ হাজার চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে গরু-মহিষের চামড়া ২ লাখ ৫৫ হাজার, বাকিগুলো ছাগল ও ভেড়ার।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, চলতি বছর রাজধানীতে প্রতি বর্গফুট গরুর লবণযুক্ত কাঁচা চামড়ার দাম ৫০-৫৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪৫-৪৮ টাকা। আর খাসির লবণযুক্ত চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ১৮-২০ টাকা এবং বকরির চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১২-১৪ টাকা দরে।
বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. মোসলেম উদ্দিন জানান, চট্টগ্রামের বিভিন্ন আড়তে আজকে পর্যন্ত ৩ লাখ ২০ হাজার পিসের মতো গরু, মহিষ ও ছাগলের চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে এবার চামড়া সংগ্রহের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল সেটা পূরণ করা সম্ভব হয়নি।
তিনি বলেন, গাউছিয়া কমিটির একজন ২১ হাজার চামড়া আমাদের আড়তদারদের কাছে বিক্রি করেছেন। আমরা প্রতি পিস চামড়া ২৫০ থেকে ৫০০ টাকায় কিনেছি। প্রায় ৪০ জন আড়তদারের মাধ্যমে এসব চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে গাউছিয়া কমিটি বাকি চামড়া আমাদের কাছে বিক্রি করবেন নাকি ঢাকার ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করবেন সে বিষয়ে এখনো কিছু জানানো হয়নি।
জানা যায়, গাউছিয়া কমিটি প্রায় সাত হাজার কর্মী মাঠে নামে, যাদের অধিকাংশই মাদরাসার ছাত্র। নগরীতে তাদের সাংগঠনিক ১৩টি থানা, ৪৭টি ওয়ার্ড এবং ৭০০ ইউনিট কমিটি আছে। প্রতিটি সাংগঠনিক ইউনিটে এক বা একাধিক চামড়া সংগ্রহের বুথ স্থাপন করা হয়। ৭০টি ভাড়ার ট্রাক এবং ৩০টি নিজস্ব ছোট-বড় ট্রাকের মাধ্যমে নগরীর অলিগলি ও বাসাবাড়িতে গিয়ে কর্মীরা সংগ্রহ করেন কোরবানির পশুর চামড়া।
সংগ্রহ করা চামড়া জমা করে লবণ দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করা হয় নগরীর বিবিরহাট এলাকায় জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসার বিশাল মাঠে। সেখানে নগরীর ১৪ থানা এলাকা থেকে সংগ্রহ করা কাঁচা চামড়া রাখা হয়। বাকি দুই থানা পতেঙ্গা ও হালিশহর থেকে সংগ্রহ করা কাঁচা চামড়া রাখা হয় হালিশহরে একটি সুন্নিয়া মাদরাসার মাঠে। সেখানেও আলাদাভাবে লবণ দিয়ে চামড়াগুলো প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে।
গাউছিয়া কমিটির তথ্যমতেও জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরী ও জেলায় মিলে এক লাখের বেশি কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করেছেন সংগঠনটির সদস্যরা। এর মধ্যে ৩৫ হাজারের মতো চামড়া নগরীর মুরাদপুরের জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া কামিলা মাদরাসা মাঠে সংরক্ষণ করা হয়। দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন মাদরাসার মাঠে ২৫-৩০ হাজার, হালিশহর এলাকায় অবস্থিত মাদরাসার মাঠে ১২-১৫ হাজার, উত্তর জেলার অধীনে বিভিন্ন মাদরাসার মাঠে সংরক্ষণ করা হয়েছে আরো ৩০-৩৫ হাজারের বেশি চামড়া।
গাউসিয়া কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ার বলেন, এবার দেড় লাখ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও সংগ্রহ হয়েছে মাত্র এক লাখ চামড়া। কোরবানি কম হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চামড়া পাওয়া যায়নি। আমাদের চামড়া কিনতে হয়নি। কোরবানিদাতারা বিনামূল্যে চামড়া আমাদের কাছে দিয়ে গেছেন। আমরা শুধু সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছি।
তিনি আরও বলেন, অতীতে চামড়া ব্যবসা সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি ছিল। এতে মৌসুমি চামড়া সংগ্রহকারীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গত কয়েক বছর আগে চামড়ার দাম না পেয়ে ডাস্টবিনে ফেলে দিতে দেখা যায়। এবছর এই পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।
এদিকে চট্টগ্রাম বিভাগে এবার ২০ লাখ ৫১ হাজার ৭৭৭টি গবাদিপশু কোরবানি হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামে ২০২২ সালে ৮ লাখ ১৩ হাজার ৫০টি পশু কোরবানি করা হয়। ২০২১ সালে কোরবানি হয় ৭ লাখ ৪২ হাজার ৪৫৫টি পশু। এবছর ৮ লাখ ৭৯ হাজার ৭১৩টি পশু কোরবানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়, যার মধ্যে গরু ৫ লাখ ২৬ হাজার ৩২৫টি, মহিষ ৭১ হাজার ৩৩৩টি, ছাগল ও ভেড়া দুই লাখ ৪৪ হাজার ৪০৫টি। অবশ্য পরবর্তীতে এই সংখ্যা কমিয়ে আনা হয় ৮ লাখ ৭৪ হাজারে।
জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. মো. আলমগীর বলেন, সামগ্রিকভাবে কোরবানির সংখ্যা বেশি হলেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০ শতাংশ কম কোরবানি হয়েছে বলে ধারণা করছি।
প্রধান সম্পাদক : বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রিয়দর্শী বড়ুয়া, প্রকাশক : প্রদীপ কান্তি দাশ, সম্পাদক : মো. নুরুল করিম আরমান, আইন বিষয়ক উপদেষ্ঠা : এ্যডভোকেট ফয়সাল আজিজ।
সম্পাদকীয় কার্ষালয় : প্রেসক্লাব ভবন (দ্বিতীয় তলা), প্রধান সড়ক, লামা পৌরসভা, বান্দরবান
ই-মেইল paharerkatha@gmail.com, মোবাইল: ০১৭৫০৪৪৪৯৯৬/০১৮১৪৮৪৫০৭৩
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত