চন্দনাইশ প্রতিনিধি |
সম্প্রতি অবিরাম বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় চন্দনাইশে শত কোটি টাকার ক্ষতি সাধন হয়েছে। মৎস্য খাতে ১০ কোটি, সড়ক, ব্রিজ, কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ৬০ কোটি, প্রাণি খাদ্যে সাড়ে ৩ কোটি, কৃষি খাতে ৩১ কোটি টাকাসহ ১’শ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়। বন্যার পানিতে ভেসে গিয়ে এক শিশুসহ ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। ৩০টি পশুর প্রাণহানি ঘটেছে। তাছাড়া ৩০ হাজার পরিবারের ১ লক্ষ ২০ হাজার মানুষ ক্ষতির স্বীকার হওয়ার পাশাপাশি ৯’শ ৮০টি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে।
পাহাড়ি ঢলে ও লাগাতর বৃষ্টির কারণে চন্দনাইশে ভয়াবহ বন্যার পানি নেমে গেলেও সড়ক, সবজি ক্ষেত, আমন ধান, মৎস্য, প্রাণি খাদ্যের ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে। এ বন্যায় উপজেলার ২টি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়নের ২ হাজার ৫৪৭টি পুকুর সম্পূর্ণভাবে ডুবে গিয়ে ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য কর্মকর্তা মো. হাসান আহসানুল কবির। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৪ হাজার ২’শ ৮৭টি পুকুরের মধ্যে ২ হাজার ৫’শ ৩৭টি পুকুর সম্পূর্ণ ডুবে গিয়ে মাছ ও অবকাঠামোগতভাবে ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ফলে ২ হাজারের অধিক মৎস্যজীবী ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
সৃষ্ট বন্যার ফলে চন্দনাইশে ৩৫ কি.মি. সড়ক ১০টির অধিক ব্রিজ, কালভার্ট সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ৬০ কোটি টাকার অধিক ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রকৌশলী জুনায়েদ আবছার চৌধুরী। তিনি বলেন, বিশেষ করে দোহাজারী, চাগাচর, জামিজুরি, হিন্দু পাড়া, বৈলতলী, খোদার হাট ব্রিজ-মাইজপাড়া, বৈলতলী সড়ক, সাতবাড়িয়া দেওয়ানহাট সড়ক, ভোর বাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগের খানহাট ধোপাছড়ি সড়ক, লালুটিয়া সড়ক, ধোপাছড়ি মংলারমুখ, চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ সকল সড়কে চিকন জিরি ব্রিজসহ ১০টির অধিক ব্রিজ কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ৬০ কোটি টাকার ক্ষতি সাধন হয়েছে। এখনো পর্যন্ত গাছবাড়িয়া ধোপাছড়ি সড়কে ধোপাছড়ির সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
অন্যান্য সড়কগুলো বন্যা পরবর্তী প্রাথমিক পর্যায়ে সংস্কারের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের জন্য চলাচলের উপযোগী করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানান। চন্দনাইশের দানাদার খাদ্য বন্যার পানিতে বিনষ্ট হয়েছে সাড়ে ৭৮ লক্ষ টাকা, প্রাণির শুকনো ঘাস নষ্ট হয়েছে সাড়ে ২৯ লক্ষ টাকা, কাঁচা ঘাস ৫৮ লক্ষ টাকা, হাঁস-মুরগির টাকা ১৫ লক্ষ টাকা, গবাদি পশুর খাবার সাড়ে ২৮ লক্ষ টাকাসহ সাড়ে ৩ কোটি টাকার ক্ষতি সাধন হয়েছে। বন্যায় পল্লী বিদ্যুৎতের ৮টি খুঁটি ভেঙ্গে পড়েছে, ১০টি হেলে পড়েছে, ৪০টি খুঁটি তার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ৪৫টি স্থানে তারের উপর গাছ উপড়ে পড়ে ৫টি ট্রান্সফরমার বিকল হয়েছে। পাশাপাশি ৫টি ইন্সুলেটর, ৮০টি বাড়ির মিটার নষ্ট হয়ে কয়েক লক্ষ টাকার ক্ষতি সাধন হয়েছে। বন্যা পরবর্তী পল্লী বিদ্যুৎতের কর্মীরা সার্বক্ষণিক কাজ করে কয়েক দিনের মাথায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করেছেন বলে জানিয়েছেন পল্লী বিদ্যুৎতের ডিজিএম প্রকৌশলী আবু সুফিয়ান। বন্যা চলাকালীন সরকারিভাবে ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের শুকনো খাবারের প্যাকেট, ৪০ মেট্রিন টন চাল বিতরণ করা হয়। বন্যা পরবর্তী ২ হাজার কৃষকের মাঝে ৫ কেজি করে বিনামূল্যে আমন ধানের বীজ ২৬৪ পরিবারে ২ বান করে ৫২৮ বান ঢেউটিন, প্রতি পরিবারে নগদ ২ হাজার টাকা করে ১৫ লক্ষ ৭৮ হাজার টাকা নগদ বিতরণ করা হয় বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা বেগম।
উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার চৌধুরী বলেছেন, চন্দনাইশে সম্প্রতি সৃষ্ট বন্যায় বিভিন্ন ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়েছে। বিশেষ করে ধোপাছড়ি, দোহাজারী, বরকল ,বরমা, সাতবাড়িয়া, বৈলতলী, হাশিমপুর ও কাঞ্চনগরের আংশিক এলাকায় মানুষের বাড়ি ঘর ভেঙ্গে পড়ে গৃহ হারা হয়েছে। ফসলি জমির একে বারে নষ্ট হয়ে পড়েছে। অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো ভেঙ্গে অনেক জায়গায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
তিনি জানান, সাধারণ মানুষের চলাচলের সুবিধার্থে উপজেলা পরিষদ থেকে বরাদ্দ দিয়ে অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো মেরামতের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, বন্যায় চন্দনাইশ, সাতকানিয়া এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়েছে।
এ ব্যাপারে প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে প্রতিটি দপ্তর থেকে প্রতিবেদন প্রেরণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, পরবর্তীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণে শঙ্খ নদীতে কাপ্তাইয়ের আদলে বাধ নির্মাণ করে শুষ্ক মৌসুমে পানি বন্ধ রেখে উপরের অংশে চাষাবাদ করার পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করবেন বলে জানান।
সে সাথে বর্ষা মৌসুমে দ্রুত পানি নিষ্কাশনের জন্য প্রকল্পে উল্লেখ থাকবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।