আবুল বশর নয়ন, বান্দরবান |
অপরাধ মূলক কাজে শিশুদের ব্যবহার নতুন কিছু নয়। বেশ কয়েক বছর ধরে দেশে শিশু-কিশোরদের দিয়ে নানা অপরাধ করানোর অভিযোগ রয়েছে। এবার ঝুকিপূর্ণ সীমান্ত থেকে চোরাই গরু আনতে ব্যবহার করা হচ্ছে শিশু-কিশোরদের। কক্সবাজারের রামু ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার প্রভাবশালী গরু চোরাকারবারী চক্র শিশুদের টাকার প্রলোভনে ফেলে মাঠে নামিয়েছে। এতে করে শিশু-কিশোররা স্কুলগামী না হয়ে ঝরে পড়ার সম্ভাবনা তৈরী হয়েছে।
সরেজমিনে রামু ও নাইক্ষ্যংছড়ির বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিশেষ ইনজেকশনের প্রভাবে দ্রুততগতিতে দৌড়াচ্ছে গরু। আর পেছনে রশি ধরে দৌড়ছে শিশু-কিশোররা। যাদের অধিকাংশের বয়স ১৮ বছরের মধ্যে। এই চিত্রগুলো বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ও রামু উপজেলার কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার। প্রতিটি গরু গন্তব্যে পৌছে দিলে ৮শ থেকে ২হাজার টাকা কামাই। মাত্র ১-২ ঘন্টার শ্রম। এমন প্রলোভনে ফেলে শিশু-কিশোরদের জড়ানো হচ্ছে চোরাই গরু পাচারে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, বয়ষ্ক শ্রমিকদের চেয়েও শিশু-কিশোরদের কম টাকা, সময় ও নিরাপদ মনে করছে চোরাকারবারীরা। শিশু-কিশোরদের ব্যবহারের মাধ্যমে আইন শৃংখলা বাহিনীর চোখ এড়ানো সহজ। এই অপরাধে জড়িয়ে পড়ার পেছনে যারা পৃষ্ঠপোষকতা করছেন তাদেরকে আইনের আওতায় আনার দাবী স্থানীয়দের।
সচেতন নাগরিকদের মতে, সীমান্তের শিশুদের সুরক্ষা দেওয়া না গেলে অল্প বয়সে অর্থের লোভ পেয়ে আরো বড় ধরনের চোরাচালানের নেশায় আসক্ত হয়ে নষ্ট হবে শিশুর ভবিষ্যৎ।
এই প্রসঙ্গে ন্যাশনাল চিলড্রেনস ট্রাস্কফোর্স কেন্দ্রীয় কমিটির গবেষনা বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ আল মাশরুর জিসান বলেন, প্রতিটি শিশুর সুরক্ষায় আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব রয়েছে। পরিবার, সমাজ, প্রশাসন এই দায়িত্ব পালন করে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সীমান্ত এলাকায় বিভিন্নভাবে চোরাচালে স্কুল, কলেজ, মাদরাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা জড়িয়ে পড়ছে এটি খুবই দুখজনক। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন জোর দিবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।
অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ম্যানেজ করে শত শত দরিদ্র পরিবারের শিশু-কিশোরদের জড়ানো হচ্ছে গরু পাচারে। এসব শিশুদের মধ্যে কেউ মায়ানমার সীমান্তে যাচ্ছে গরু আনতে আবার কেউ রামুর হাজিরপাড়া, মৌলভীরকাটা, চাকমারকাটা, ডাক্তারকাটা, ফাক্রিকাটা, ঢাকভাঙ্গা ও নাইক্ষ্যংছড়ির রূপনগর সড়ক ব্যবহার করে চোরাই গরু পৌছে দিচ্ছে গন্তব্যে। সরেজমিনে অনুসন্ধানে এসব শিশুরা ক্যামেরা দেখলেই দৌড়ে পালিয়ে যায়, কেউ মুখ ঢেকে সটকে পড়ে। তবে শিশুরা গরু পাচারে সম্পৃক্ত এমন তথ্য জানা নেই নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা প্রশাসনের।
এই বিষয়ে ইউএনও রোমেন শর্মা বলেন, পার্শ্ববর্তী এলাকায় শিশুরা এমন অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে হয়তো, তবে তাঁর উপজেলায় এই সংখ্যা খুবই কম। অন্যদিকে রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাহমিদা মুস্তফা বলেন, প্রত্যেক শিশুর দায়িত্ব পরিবার ও সমাজের উপর রয়েছে। অপরাধে শিশুরা জড়িয়ে পড়ার দায় সরকারী কর্মকর্তা হিসেবে নিজের উপরও রয়েছে। তবে বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বর্তমানে চোরাই গরু পাচারের সঙ্গে অধিকাংশ পরিবার জড়িয়ে পড়েছে। টাকার প্রলোভনে পড়ে শিশুরাও এই কাজে জড়িয়েছে। তবে এর সম্পূর্ণ দায়ভার প্রভাবশালী চোরাকারবারীদের উপর রয়েছে। কারণ তারা পর্দার আড়ালে থেকে শিশুদের ব্যবহার করছে। গরু চোরাকারবারে জড়িত প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইন শৃংখলা বাহিনীর তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানান তারা।
প্রসঙ্গত, নাইক্ষ্যংছড়ি ও পার্শ্ববর্তী কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের প্রভাবশালী মহল পর্দার আড়ালে থেকে সীমান্ত থেকে অবৈধভাবে চোরাই গরু বানিজ্য করে আসছে। এই চক্রটি নাইক্ষ্যংছড়ি ও দোছড়ি ইউনিয়নের নতুন নতুন পাহাড়ী পথে গরু পাচার করছে। এতে করে সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব।
প্রধান সম্পাদক : বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রিয়দর্শী বড়ুয়া, প্রকাশক : প্রদীপ কান্তি দাশ, সম্পাদক : মো. নুরুল করিম আরমান, আইন বিষয়ক উপদেষ্ঠা : এ্যডভোকেট ফয়সাল আজিজ।
সম্পাদকীয় কার্ষালয় : প্রেসক্লাব ভবন (দ্বিতীয় তলা), প্রধান সড়ক, লামা পৌরসভা, বান্দরবান
ই-মেইল paharerkatha@gmail.com, মোবাইল: ০১৭৫০৪৪৪৯৯৬/০১৮১৪৮৪৫০৭৩
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত