পাহাড়ের কথা ডেস্ক ।
পার্বত্য জেলাগুলোতে আঞ্চলিক সশস্ত্র গ্রুপগুলোর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় প্রায়ই অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ফলে পাহাড়ে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি পর্যটন ব্যবসাসহ অন্যান্য ব্যবসায় ধস নামে। এছাড়া পাহাড়ে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও বাঙালি ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটে। এদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৬ বছরেও সশস্ত্র গ্রুপগুলোর কারণে পুরোপুরি শান্তি ফিরে আসেনি পাহাড়ে। দিন দিন বেড়েই চলেছে আঞ্চলিক সশস্ত্র গ্রুপগুলোর তৎপরতা।
এদিকে পার্বত্য জেলা রাঙামাটির বরকল উপজেলার শুভলং পয়েন্ট বেড়ের চাঁদা আদায়ের মাত্রা। মূলত কাপ্তাই লেকের এক অংশের সাথে আরেক অংশের যুক্ত করেছে শুভলং পয়েন্ট।
শুভলং পয়েন্ট ছাড়া জেলার জুরাছড়ি, হাজাছড়া, মাইছছড়িসহ কাপ্তাই লেকের ওই অংশ থেকে রাঙামাটি শহরে যেতে হলে শুভলং পয়েন্ট অতিক্রম করতে হয়।
শুধু যাত্রী চলাচল নয়, বাঁশ, কাঠ, ফলসহ পাহাড়ি অন্যান্য পণ্য রাঙ্গামাটি যায় এ শুভলং পয়েন্ট হয়ে। পণ্য বহনকারী প্রতিটি ট্রলার ও নৌকা মালিককে নির্দিষ্ট হারে চাঁদা দিতে হয় আঞ্চলিক সশস্ত্র গ্রুপগুলোকে। এই কারণে শুভলং পয়েন্টে আধিপত্য ধরে রাখতে আঞ্চলিক সশস্ত্র গ্রুপগুলোর মধ্যে প্রায়ই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, তিন পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবানে জেএসএস (মূল), জেএসএস (সংস্কার), ইউপিডিএফ (মূল) ও ইউডিএফ (ডেমোক্রেটিক)-সহ অন্যান্য উপজাতীয় সংগঠনগুলো নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখতে দেশের জাতীয় রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মকাণ্ড পরিচালনায় নানাভাবে বাধা সৃষ্টি করে থাকে।
এছাড়া পাহাড়ে নতুন গজিয়ে ওঠা কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট নামে আরেকটি সশস্ত্র গ্রুপ। যারা প্রত্যন্ত অঞ্চলের উপজাতীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের হত্যা, হত্যার হুমকি, নির্যাতন ও অপহরণের মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে। এদিকে সশস্ত্র এ গ্রুপটির ভয়ে জীবন বাঁচাতে বিগত সময়ে আওয়ামী লীগ থেকে চার শতাধিক উপজাতীয় নেতাকর্মী পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে। যারা পদত্যাগ করেননি তাদের অনেকে এলাকা ছেড়ে শহরসহ দেশের বিভিন্নস্থানে আশ্রয় নিয়েছে।
সূত্রে জানা যায়, প্রতি মাসে শুভলং পয়েন্ট অতিক্রমসহ কাপ্তাই লেক এলাকায় লঞ্চ ও বোট মালিকদের দিতে হয় দুই হাজার টাকা করে। প্রতি নৌকার মাঝিকে দিতে হয় দুই হাজার টাকা। সিএনজিচালিত অটোরিকশাপ্রতি এক হাজার ২০০ টাকা। মুদি দোকানদারকে দিতে হয় ৮০০ টাকা। দোকান মালিক দেন দুই হাজার টাকা। ব্যবসায়ী সমিতি থেকে দেওয়া হয় ২০ হাজার টাকা। মাছ ব্যবসায়ীকে দিতে হয় পাঁচ হাজার টাকা। আদা ও হলুদের ব্যবসায়ীদের দিতে হয় দুই হাজার টাকা। গরু ব্যবসায়ীদের দিতে হয় ১০ হাজার টাকা। সবজি ব্যবসায়ীরা দেন এক হাজার টাকা করে।
এছাড়া সেগুনবাগানের মালিকদের দিতে হয় পাঁচ হাজার টাকা। ফলের বাগান মালিককে দিতে হয় এক হাজার টাকা। পাড়ার প্রতিটি পরিবারকে ২৫০ টাকা, রেস্টুরেন্ট প্রতি ৩০ হাজার টাকা ও পার্ক বাবদ ২০ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়। যেখানে যে গ্রুপের আধিপত্য সেখানে তারাই এসব চাঁদার টাকা নিয়ে থাকে। সবমিলিয়ে প্রতিবছর তিন পার্বত্য জেলায় সশস্ত্র গ্রুপগুলো ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি টাকা চাঁদাবাজি করে থাকে বলেও জানা যায়।
এ বিষয়ে রাঙামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, পাহাড়ে আঞ্চলিক সংগঠনগুলো যেসব কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে, তাতে মনে হয় না তাদের ভালো কোনও উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য আছে। তারা চাঁদাবাজি, অপহরণের পাশাপাশি বিভিন্ন সময় নিজেদের মধ্যে সংঘাতেও জড়িয়ে পড়ছে।
তিনি আরো বলেন, আঞ্চলিক সশস্ত্র গ্রুপগুলো যদি মানুষের অধিকারের জন্য সংগঠন করে থাকে, তাহলে নিজেদের মধ্যে হানাহানি, মারামারি, অপহরণ ও চাঁদাবাজি কেন করবে? গণতন্ত্রের ওপর হস্তক্ষেপ কেন?
যদিও তারা এসব অস্বীকার করে, তাহলে এগুলো কারা করে। তাদের খুঁজে বের করে না কেন ওরা? বলেও যোগ করেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে রাঙ্গামাটি জেলার পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ জানান, আঞ্চলিক যেসব সংগঠন এখানে রয়েছে সেগুলোর তৎপরতা রয়েছে। চাঁদাবাজি নিয়ে এখানে বড় অভিযোগ রয়েছে।
তিনি আরো জানান, গত এক বছরে আঞ্চলিক সশস্ত্র গ্রুপগুলোর সংঘাতে খুনের ঘটনা ঘটেছে মাত্র ৫টি। এছাড়া অপহরণের ঘটনা ঘটেছে চারটি। তবে সব ক্ষেত্রেই পুলিশ তৎপর রয়েছে বলেও নিশ্চিত করেন তিনি। সূত্র-পার্বত্যনিউজ