আলী করিম প্রবাস থেকে ছুটিতে এসে নলকূপ বসাচ্ছেন। সে নলকূপেই মিলছে গ্যাসের অস্তিত্ব। গত ১৭ সেপ্টেম্বর ঘটনাটি ঘটেছে বাঁশখালী উপজেলার বাহারচরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের জলকদর খালের বেড়িবাঁধসংলগ্ন মইদ্দারো বাড়ির ছাবের আহমদের নতুন বাড়িতে। স্থানীয় লোকজনের মুখে শুনে এই প্রতিবেদক ছুটে যান ঘটনাস্থলে। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, কাদা দিয়ে স্থানটি আঁটোসাঁটো করে লেপ্টে দেয়া হয়েছে। ওপরের অংশটি প্রায় শুকিয়ে গেছে। সাংবাদিক আসার খবর পেয়ে ঘরের বাসিন্দাদের মধ্যে এক ধরনের কৌতূহল লক্ষ্য করা যায়। তবে কেউ কথা বলতে রাজি হচ্ছিল না। ওই বাড়ির প্রবীণ ব্যক্তি আলী আকবরের সঙ্গে এই প্রতিবেদক কথা বললে বিষয়টা পরিষ্কার হয়, কেন তারা কথা বলতে রাজি হচ্ছিলেন না।
আলী আকবর জানান, স্থানীয়দের অনেকে ভয় দেখিয়ে বলেছিল, এটা জানাজানি হলে সরকার এই জায়গা নিয়ে নিবে। মূলত এই ভীতিতে তারা কথা বলতে রাজি হচ্ছিল না। প্রবাসী আলী করিম দেশে এসে পরিবারের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা করতে নলকূপ বসানোর ব্যবস্থা করেন। নলকূপ মিস্ত্রি মাটির নিচে পাইপ বসাতে গিয়ে টের পান কোনো কিছুর অস্বাভাবিক চাপ। দমকা হাওয়ার চাপ এতটাই ছিল যে, প্লাস্টিকের পাইপ আর ভেতরে প্রবেশ করানো যায়নি। বাধ্য হয়ে নলকূপ মিস্ত্রি আরও দক্ষিণে গিয়ে নতুন করে নলকূপ বসান। সেখানেও চাপ অনুভব করলেও মিস্ত্রিদল নলকূপ বসাতে সমর্থ হয়।
এই প্রতিবেদক প্রবাসী আলী করিমকে ভিজিটিং কার্ড দিয়ে আসেন এবং তাকে আশ্বস্ত করেন, এখানে গ্যাস কূপ আবিষ্কৃত হলে এটি জাতীয় সম্পদে পরিণত হবে। সরকারও এই জমি অধিগ্রহণ করলে তাদের জমির মূল্যের বহুগুণ মূল্য তারা পাবেন, সেইসঙ্গে পুনর্বাসিত করার সুযোগও পাবেন। গ্যাসের আভাস পেলে ফোন দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে চলে আসেন এই প্রতিবেদক।
এরপর গত বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রবাসী আলী করিম ফোন দেন প্রতিবেদককে। আলী করিম বলেন, ‘আমি একজন প্রবাসী, দেশে এসে সুপেয় পানির জন্য নলকূপ বসাতে গিয়ে বিপত্তিতে পড়ে যাই। এটি নিয়ে হইচই পড়ে গেলে আমার পরিবারের কোনো সমস্যা হতে পারে ভেবে বিষয়টি প্রকাশ করতে চাইনি। কিন্তু বৃষ্টির পানিতে ঢেকে দেয়া মাটি সরে গেলে পুনরায় ওই কূপ দিয়ে বুঁদবুঁদ করে বাতাস উঠতে থাকে। ভয়ে আছি, এ বিষয়ে আমরা কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা চাই।’
পুনরায় গিয়ে দেখা যায় ওই স্থান দিয়ে বুঁদবুঁদ উঠছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ এনামের উপস্থিতিতে সেই জায়গাটির মুখ চারপাশ থেকে কাদামাটি দিয়ে মুখ ছোট করা হয়। জমে থাকা পানি সরিয়ে আগুন দেয়া হলে আগুন জ্বলতে থাকে। বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবার সুযোগ এসেছে বলে জানান স্থানীয় কয়েকজন।
ইউপি সদস্য মোহাম্মদ এনাম বলেন, ‘আমি ইতোমধ্যে বেশ কয়েকবার এসেছি। প্রায় ১৭ দিন ধরে এই জায়গা দিয়ে অনবরত গ্যাস নিঃসৃত হচ্ছে। বিষয়টি যদি পকেট গ্যাস, কিংবা অল্প জমা গ্যাস হতো তবে এতদিনে নিঃশেষ হয়ে যেত। আমি বাপেক্সসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি, বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য।’
বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন আক্তার বলেন, ‘ইতোপূর্বে আমরা এমন খবর পেয়েছি। সেটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবর শুনেছিলাম। নতুন করে আবার গ্যাস নিঃসৃত হওয়ার বিষয়টি আপনার কাছে জানলাম। বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হবে।’