এ যেন ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস সিনেমার গল্পকেও হার মানাবে বেপরোয়া গতিতে চলা চাঁদের গাড়ি (থ্রি হুইলার) চালকরা। বেপরোয়া গতিতে চালিয়ে পর্যটন স্পটে পৌছানোর প্রতিযোগিতা যেন ক্রমেই বাড়ছে। কে আগে যাবে আবার কে আগে পৌছাবে এ নিয়ে চালকদের মধ্যে এক ধরনের প্রতিযোগিতা শুরু হয়। অভিযোগ আছে কিছু অদক্ষ চাঁদের গাড়ি (থ্রি হুইলার) চালকরা বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালান পাহাড়ের সড়ক জুড়ে। সেসব অদক্ষদের মনিটরিং করছেন না জীপ ও মাইক্রো চালক সমিতি ও মালিকরা।
অভিযোগ আছে, বর্তমানে যেসব প্রজন্মের গাড়ি চালক রয়েছে তারা কোন রকমে গাড়ির স্টায়ারিং, ক্লাস, ব্রেক ও গিয়ার ধরতে জানলে চালক হিসেবে আখ্যায়িত দেয়া হয়। অথচ মাত্র তিনমাস প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষতা অর্জন না করে পাহাড়ের শুরু করে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো। তাছাড়া সেসব নতুন গাড়ির চালক অদক্ষদের প্রশিক্ষণ কিংবা যাচাই-বাছাই না করে গাড়ি তুলে দিচ্ছেন মালিক কিংবা সেসব পেশায় জড়িত চালকেরা।
বান্দরবান- নীলগিরি পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটার সড়ক। সড়ক দিয়ে যেতে মিলনছড়ি-শৈলপ্রপাত -চিম্বুক ও সবশেষ নীলগিরি পৌছাতে হয়। কোথাও ঢালু, কোথাও উঁচু আবার প্রতিটি সড়কের বিপদজনক মোড়। কিন্তু সেই সড়কের দিয়ে বেপরোয়া গতিতে ছুটে চলে চাঁদের গাড়িগুলো। মোড়ের বাক ঘুরলে নাই কোন হর্ণের শব্দ, নাই কোন সিগনাল। নতুন প্রজন্মের চালকদের এসবের দক্ষতা না থাকায় প্রতিনিয়ত এমন বেপরোয়া গতিতে ছুটছে গাড়িগুলো।
জীপ ও মাইক্রোবাস চালক সমিতি তথ্য মতে, বান্দরবানে বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে চলাচল করছে ৪শত অধিক চাদের গাড়ি। চালক ও হেলপার মিলে রয়েছে ৫শত অধিক মানুষ। কয়েক দশক থেকে দক্ষতা নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন ৩শত অধিক আর বর্তমান যুগে অদক্ষ রয়েছে ৩০ জনের অধিক। কিন্তু তাদের নাই কোন প্রশিক্ষণ কিংবা দক্ষতা অর্জন।
বান্দরবানে শহরে পর্যটকদের আগমন ঘটে প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার, শুক্রবার ও শনিবার। এই ছুটির দিনে উপচে পড়ার ভীড় থাকে জীপ ও মাইক্রোবাস ষ্টেশনে। সিরিয়াল নিয়ে পর্যটকদের নিয়ে চাদের গাড়িগুলো একে একে ষ্টেশন ছেড়ে যায় বিভিন্ন পর্যটন স্পটে। বেশীর ভাগই গাড়ি নিয়ে ছুটে যান নতুন প্রজন্মের চালকেরা। এরপরই গাড়িগুলোতে শুরু হয় এক ধরনের বেপরোয়া গতিতে চালানোর প্রতিযোগিতা। বাঁচা কিংবা মরা ও দুর্ঘটনাকে তোয়াক্কা না করে পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে বেপরোয়া গতিতে ছুটে যান অদক্ষ চালকেরা।
জেলা বিআরটিএ বলছে, বান্দরবানে বিভিন্ন পর্যটন স্পটে যাওয়া ৪শত অধিক চাদের গাড়ি রয়েছে। সেসব প্রতিটি গাড়িগুলো ফিটনেসবিহীন। যত্রতত্র দিয়ে পাহাড়ের চলাফেরা করছে সেসব গাড়ি। তাছাড়া গাড়ি নাম্বারগুলো জেলা বাইরে অন্তর্ভুক্ত হওয়াতেই নির্দিষ্ট তথ্য নাই সংশ্লিষ্টদের কাছে।
কয়েকদশক আগে যেসব দক্ষ চালকরা ছিল তাদের হাত ধরে চেলারা (শিষ্য) দক্ষতা অর্জনের সাথে এখনো গাড়ি চালাচ্ছেন। স্বয়ংক্রিয়ভাবে থাকায় এখনো ওস্তাদ (গুরু) নিয়মকানুন মেনে চলছেন। অধিকাংশ দক্ষ চালক সরকারী, আধা-সরকারী কিংবা বিদেশে পাড়ি দিয়েছন। কিন্তু কিছু অদক্ষ চালকদের মনিটরিং করছেন নাহ গাড়ির মালিক ও সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষরাও। যার ফলে পাহাড়ের বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর যেন দিন দিন ক্রমাগতই বেড়ে চলেছে।
২৭ বছর ধরে পাহাড়ে চাঁদের গাড়ি চালাচ্ছেন মো. ফরিদ মিয়া। তিনি বলেন, আমাদের সময় একজন ছেলে গাড়ি শিখতে চাইলে প্রথমে গাড়ি ধোয়ামুছা থেকে শুরু করে যন্ত্রপাতি বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে হয়। এরপর দুই তিনবছর হেল্পার হিসেবে রেখে দক্ষতা অর্জনের পর গাড়ি বুঝিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু বর্তমান যুগে সেই নিয়ম আর নাই।
একইভাবে ১৭ বছর চাদের গাড়ি চালিয়ে সংসার চালান বিপ্লব দাশ। তিনি বলেন, পাহাড়ের গাড়ি চালাতে গেলে তার ওই সড়ক বিষয়ে দক্ষতা ও জ্ঞান অর্জন করতে হবে। কিন্তু বর্তমান যুগে নতুন প্রজন্ম যারা গাড়ি চালায় তাদের বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো কারণে দক্ষ চালকদের অসম্মানজনক আখ্যা দিয়েছে। তবুও যারা অদক্ষ আছে তাদেরকে অফিসে ডেকে বুঝানো হচ্ছে।
জীপ ও মাইক্রোবাস চালক সমিতি সভাপতি মো. হোসাইন বলেন, আমরা প্রতিটি সভাতে দক্ষ ও অদক্ষ চালকদের মনিটরিং করছি। যারা চালক রয়েছে তাদেরকে মদ্যপানসহ বিভিন্ন নেশা জাতীয় থেকে বিরত থাকার জন্য পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। অন্যথায় লাইন থেকে বহিস্কার করা হচ্ছে। তাছাড়া কোন অভিযোগ আসলে সাথে সাথে তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া হয়। সূত্র-পার্বত্য নিউজ।