গত কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টির ফলে বান্দরবানে সৃষ্ট বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। তবে তীব্র বন্যায় সাঙ্গু নদীর তীরে ভাঙন দেখা দিয়েছে। পানি নামার স্রোতে এখন পর্যন্ত ৯টি বসতঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এর আগে এক সপ্তাহের বন্যায় পানিতে অনেকের বাড়ি স্রোতের টানে নদীতে ভেসে যায়। এছাড়াও বালি আর কাদামাটি জমে নষ্ট হয়ে গেছে প্রায় শতাধিক বসতবাড়ি।
১১ আগস্ট, শুক্রবার সকালে নদীর পাশে থাকা তিনটি টিনশেট ঘর ধসে পড়ে। বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টায় বান্দরবান সদরস্থ মধ্যমপাড়া নদীর পাড় এলাকায় দু’তলা ঘর ধসে যায়। এর আগে ৫টি ঘর আংশিক হেলে পড়ে। তবে বাড়িতে কেউ না থাকায় হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। এরপর এলাকাটিকে চরম ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে বান্দরবান পৌরসভা।
ক্ষতিগ্রস্তরা হলেন, বান্দরবান পৌরসভার মধ্যমপাড়া সাঙ্গু নদীর তীর এলাকার রেখা দাশ, রুপনা বড়ুয়া, বিন্দু দাস, লিটন বড়ুয়া, শানু বড়ুয়া, বিজয় বড়ুয়া, উনাইসিং মারমা, থুইসে মারমা ও পারুল বড়ুয়া।
বন্যায় পানি নেমে যাওয়ার পর বাড়ি-ঘরে বালি আর কাদামাটি জমে গেলে সেগুলো পরিষ্কারে জন্য ব্যবহার করার হয় ভারী দমকল মেশিন। এতে মাত্রাতিরিক্ত পানি ব্যবহার ফলে ঘর-বাড়ি নড়বড়ে হয়ে পড়ে। ফলে এসব জায়গায় এখনও নরম বালি আর মাটি থাকার কারণে বাড়ি-ঘর ধসে গেছে। এসব স্থানে কোনো আরসিসিআর গ্রেট ওয়াল ও পাইলিং ছাড়া অত্যন্ত নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ঘর নির্মাণ করার কারণে বন্যার পানিতে বাড়ির স্তর ধসে পড়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা জানান, বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। কিছু কিছু নিচু জায়গায় এখনও পানি জমে আছে। এরই মধ্যে মধ্যমপাড়া সাঙ্গু নদীর তীর এলাকায় বসবাসরত একটি দোতলা দালান ও ৭টি কাচা ঘর নদীতে ধসে গেছে। ওই এলাকার কিছু জায়গা আরো কয়েকটি ঘর ধসে পড়তে পারে। তাই ঝুঁকি এড়াতে লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।
বান্দরবান ফায়ার সার্ভিসের সহকারি পরিচালক পূর্ণচন্দ্র মুৎসুদ্দি জানান, বন্যা পরবর্তী মধ্যমপাড়া সাঙ্গু নদীর তীর এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়ায় বসবাসরত সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে এবং নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষে জানান হয়েছে।
বান্দরবান পৌর মেয়র সৌরভ দাশ শেখর সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ভাঙন কবলিত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ওই এলাকাকে চরম ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার পাশাপাশি বসবাসরত সবাইকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে বলা হয়েছে।
এদিকে কয়েকদিন টানা বর্ষণের ফলে সড়কের বিভিন্ন স্থানে মাটি ধসে পড়েছে। আবার কোথাও কোথাও মাটি ধসে পড়ে রাস্তা ব্লক হয়ে গেছে। এতে সারাদেশের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হলেও বান্দরবান-রাঙ্গামাটি ও রুমা এবং থানচি উপজেলার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বান্দরবান সদরে বাজার ও উজানি পাড়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ থাকলেও অন্যান্য এলাকায় এখনো বিদ্যুৎ সংযোগ চালু হয়নি। শহর এলাকা ছাড়া বাকি ছয়টি উপজেলায় এখনো বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ রয়েছে।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন জানান, দুর্যোগে কেউ যেনো অনাহারে না থাকেন সেজন্য ক্ষতিগ্রস্তদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশ, ফায়ারসার্ভিস একসঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে। সম্পূর্ণভাবে পানি না নামায় ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি বলে জানান এ কর্মকর্তা।