বান্দরবান প্রতিনিধি ।
দীর্ঘদিন ধরে নিষেধাজ্ঞা কারণে স্থবির হয়ে আছে বান্দরবানে থানচি, রুমা ও রোয়াংছড়িসহ তিন উপজেলা পর্যটন খাত। পর্যটকদের আনাগোনা বন্ধ থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পর্যটক গাইড, নৌকা চালকসহ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। ফলে দিনদিন মানবেতর জীবন কাটানো পাশাপাশি পেশা বদলাচ্ছে পর্যটনশিল্পে জড়িত সংশ্লিষ্টরা। ফলে নিরাপত্তা জোরদার করে দ্রুত পর্যটন স্পট খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। দেশের অন্যতম পর্যটন গন্তব্য ‘পাহাড় কন্যা’ বান্দরবান। এ জেলার রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলায় আছে দেশের সুউচ্চ পাহাড় কেওক্রাডং, তাজিংডং, রেমাক্রী, নাফাখুম, দেবতাখুম, বগালেক, রিঝুক ঝরনাসহ অসংখ্য দর্শনীয় স্থান। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য উপভোগে প্রতিদিন দেশ-বিদেশের হাজার হাজার ভ্রমণপিপাসু ছুটে যান এসব পর্যটনকেন্দ্রে। বর্তমানে এসব পর্যটন কেন্দ্র থমকে আছে।
গেল বছর খানেক আগেও বান্দরবানে পর্যটন স্পট থানচি তমাতুঙ্গী, রেমাক্রী, তিন্দু, রুমায় বগালেক, কেউক্রাডং ও রোয়াংছড়িতে দেবকুম শিলবান্ধা ঝরনাসহ এসব স্পটগুলোতে ছিল পর্যটকের ঢল। সেসময় ভ্রমণ পিপাসুদের পদচারণায় মুখরিত থাকত প্রতিটি পর্যটন স্পটগুলো। কিন্তু বর্তমানের সেসব স্পটে চিত্র এখন অনেকটাই বিপরীত। গেল বছর ফেব্রুয়ারি দিকে রুমা ও থানচিতে দুটি ব্যাংকের অতর্কিতভাবে ডাকাতির শুরু করে কেএনএফ সদস্যরা। এই ঘটনাটি পর তিন উপজেলায় নিরাপত্তা জনিত কারণে নিষেধাজ্ঞা জারি করে প্রশাসন। এরপর থেকে টানা কয়েক বছর মুখ থুবড়ে পড়েছে তিন উপজেলা পর্যটনের খাত। বন্ধ হয়ে যায় তিন উপজেলার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অর্থনৈতিক চাকাঁ। থানচি তমাতুঙ্গী, রেমাক্রী, তিন্দু, নাফাকুমসহ আরো বেশ কয়েকটি রোমাঞ্চকর পর্যটন স্পট রয়েছে। সেখানে পর্যটক প্রেমীদের লাগাতার ভিড় লেগে থাকে এই পর্যটন মৌসুমে। একই চিত্র রোয়াংছড়ি, দেবতাকুম, শিলবান্ধা ঝর্ণা, রুমা বগালেক,কেউক্রাডংসহ অন্যান্য পর্যটন স্পটেও। বিভিন্ন জেলা থেকে বাইকে কিংবা দলবদ্ধভাবে হাইকিং করতে রোমাঞ্চের উপভোগ করতে আসেন প্রতিনিয়ত। কিন্তু সেসব দর্শনীয় স্থানগুলো এখন পর্যটক শূন্য।
দীর্ঘ মাস ধরে সেসব পর্যটন স্পট বন্ধ থাকায় রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা উপভোগ করতে পারছেন না ভ্রমণ পিপাসুরা। এতে একদিকে যেমন ক্ষুদ্রব্যবসায়ীরা লোকসান মুখে পড়তে হচ্ছে তেমনি দিন দিন বেকার হচ্ছে ট্যুরিস্ট গাইডসহ নৌকা চালকরা। পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ট্যুর গাইড, নৌশ্রমিক, পরিবহণ শ্রমিকসহ হোটেল-মোটেলে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন স্থানীয় পাঁচ শতাধিক যুবক। কিন্তু রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলার দর্শনীয় স্থানগুলোতে পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে প্রশাসন। পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে তিন উপজেলার পর্যটন স্পটগুলো। কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে ট্যুর গাইড, নৌ শ্রমিকসহ হোটেল-মোটেলের কর্মচারীরা। দীর্ঘদিন ধরে পর্যটক না আসায় জীবিকার তাগিদে পর্যটনের সঙ্গে জড়িত অনেকেই পেশা বদলে দিনমজুরি, জুমচাষসহ বিভিন্ন কাজে যোগ দিয়েছেন।
অনেকে বেকার অবস্থায় পরিবার নিয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। রোয়াংছড়ি ও থানচি পর্যটক গাইডের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পলাশ তঞ্চঙ্গ্যা ও মামুন বলেন, আমাদের অনেকেই বাধ্য হয়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন। যদি এই পরিস্থিতি চলতে থাকে, তাহলে আমাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা কষ্টসাধ্য হবে। তাই প্রশাসনের নিকট আকুল আবেদন, যত দ্রুত সম্ভব পাহাড়ের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে পর্যটন খুলে দেয়া দাবি জানান তারা। জেলা পরিষদ সদস্য খামলাই ম্রো বলেন, এই পর্যটন ব্যবসায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কয়েক হাজার মানুষ এই পেশায় জড়িত। তাই নিরাপত্তা জোরদার করে পর্যটন কেন্দ্র খুলে দিয়ে আবারো অর্থনৈতিক চাকাঁ ঘুরানো দাবি জানান। বান্দরবানে ট্যুরিস্ট পুলিশ অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, পর্যটন খুলে দেয়ার ব্যাপারে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাথে আলাপ আলোচনা চলছে। আশা করছি যে-সব পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে সেসব স্পট গুলো নিরাপত্তা জোরদার করে দ্রুত খুলে দেয়ার আশ্বাসের কথা জানান এই কর্মকর্তা।