বান্দরবান জেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় কেটে চলছে বসতবাড়ি ও বিভিন্ন স্থাপনার কাজ। কৌশলে দিনে অল্প পরিমাণে কাটা হলেও সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে পুরোদমে পাহাড় কাটা, ফলে পরিবেশ পড়ছে বিপর্যয়ের মুখে। অনেক এলাকায় পাহাড় কেটে ট্রাকে ট্রাকে মাটি নিয়ে যাওয়া হয় বিভিন্ন স্থানে। এদিকে সম্প্রতি বান্দরবান জেলা সদরের একটি অনাথালয় চত্বরে রাত নামলেই পাহাড় কাটা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এভাবে দুই সপ্তাহ ধরে প্রতি রাতেই বান্দরবান বৌদ্ধ অনাথালয়ের ভেতর চলছে নির্বিচারে পাহাড় কাটা। পাহাড় কাটার মাটি ট্রাকযোগে জেলা সদরের বালাঘাটা এলাকায় একটি নিচু স্থান ভরাট করা হচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, পাহাড় খেকো ইয়াছিন নামের এক যুবকের অধীনে অবৈধভাবে পাহাড় কাটার কাজ চলছে। প্রতিদিন রাত ৮টার পর থেকে ভোর রাত পর্যন্ত দু’টি এস্কেভেটর দিয়ে পাহাড় কাটার কাজ চলে। এ ছাড়া পাহাড় কাটার একটি বড় চক্র পরিবেশ অধিদপ্তর ম্যানেজ করে রাতে-দিনে পাহাড় কাটছে। বান্দরবান প্রেস ক্লাবের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, বান্দরবানের সুন্দর পরিবেশ নষ্ট করতে কয়েকজন পাহাড় খেকো অবৈধভাবে পাহাড় কাটছে। কয়েকজনকে আটক দৃষ্টান্তমূলক শান্তি দিলে এ রকম অন্যায় কাজ থেকে সবাই বিরত থাকবে।
এদিকে বৌদ্ধ অনাথালয়ের পাহাড় কাটার বিষয়ে সংবাদ পেয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর বান্দরবানের একটি টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে এর সত্যতা পেয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের সিনিয়র কেমিস্ট আবদুছ ছালাম জানান, অনাথালয়ের ভিতরে অবৈধভাবে আনুমানিক ২৫০ ফুট দৈর্ঘ্য, ৩০ ফুট প্রস্থ ও প্রায় ৪০ ফুট উঁচু পাহাড় কাটা হয়েছে, যেখান থেকে প্রায় দেড় লাখ ঘনফুট পাহাড়ের মাটি সরানো হয়েছে। পাহাড় কাটছিল ইয়াসিন নামের এক যুবক। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। এ ছাড়া গত বছরে পার্বত্য জেলা বান্দরবানে অবৈধভাবে পাহাড় কাটার দায়ে শতাধিক মামলা করা হয়েছে। এ বিষয়ে বান্দরবান বৌদ্ধ অনাথালয়ের বিহারাধ্যক্ষ তিক্ষিন্দ্রীয় থেরো’র জানান, অনাথালয় ছাত্র নিবাসে চলাচলের জন্য একটি সড়ক নির্মাণ প্রয়োজন আর সে জন্যই পাহাড় কেটে এই সড়কটি নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। পাহাড় কাটার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে কোনো অনুমতি নিয়েছেন কি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আসলে তেমন কোনো অনুমতি নেয়া হয়নি। বান্দরবানের পরিবেশ অধিদপ্তর সহকারী পরিচালক ফখর উদ্দিন চৌধুরী জানান, পাহাড় কাটার সংবাদ পেয়ে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি এবং এই বিষয়ে অনাথালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ভিক্ষু তিক্ষিন্দ্রীয় থেরো ও পাহাড় কাটার কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে এনফোর্সমেন্ট মামলা করা হবে।