কুতুবদিয়া প্রতিনিধি |
ঈদের আগেই ঈদ আনন্দে ভাসছেন কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ার মানুষ। স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো সাগর তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন ক্যাবলে জাতীয় গ্রীডের বিদ্যুতের আলো পেয়ে উচ্ছ্বসিত দ্বীপবাসী। বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রথম দিনেই জাতীয় গ্রীড থেকে বিদ্যুৎ পেয়েছেন ১২০০ গ্রাহক।
বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) বেলা ১১টায় পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ সরবরাহ কার্যক্রমের সূচনা করেন কুতুবদিয়া মহেশখালীর সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক। এসময় তিনি বলেন, বিদ্যুত আসায় দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ার অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন ঘটবে।
চারপাশে সাগর বেষ্টিত ২শ ১৫ বর্গকিলোমিটারের দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ার জনসংখ্যা দেড় লাখের বেশি। গেলো ৫ দশক ধরে এই দ্বীপে বিদ্যুৎ ছিল যেন সোনার হরিণ। বায়ু বিদ্যুৎ ও জেনারেটরের মাধ্যমে কিছু বসতি আলোকিত হলেও সিংহভাগ মানুষই ছিল বিদ্যুৎ বঞ্চিত।
অবশেষে দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান হলো এবার। জাতীয় গ্রীডের সঙ্গে যুক্ত করে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে প্রথমবার বিদ্যুৎ পেলেন দ্বীপবাসি। বুধবার রাতে পরীক্ষার পর বৃহস্পতিবার সকালে শুরু হয় বিদ্যুৎ সরবরাহ। স্বপ্নপূরণের মাইলফলক মন্তব্য করে এটি ঈদ আনন্দের চেয়েও বেশি বলেছেন দ্বীপের বাসিন্দারা।
দ্বীপের বাসিন্দা আরিফ বলেন, দ্বীপে বিদ্যুৎ এসেছে এটা যেন অবিশ্বাস্য একটা ঘটনা। আমরা যে বিদ্যুৎ পাব একথা কোনদিন কল্পনাই করিনি। এখন দ্বীপবাসির মাঝে আনন্দের বন্যা বইছে।
দ্বীপের আরেক বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ঈদের আগেই যেন কুতুবদিয়াবাসী ঈদ আনন্দে ভাসছি। দল-মত নির্বিশেষে কুতুবদিয়ার সকল মানুষ আনন্দে উদ্ভাসিত। আমরা কুতুবদিয়াবাসী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিরকৃতজ্ঞ।
কুতুবদিয়ার বড়ঘোপ বাজারের ব্যবসায়ি সাইফুল ইসলাম বলেন, বিদ্যুৎ নিয়ে অনেক কষ্ট পেয়েছি। ১২ এপ্রিল রাত ৯টা থেকে এখনো আমরা জাতীয় গ্রিড থেকে সরবরাহ করা বিদ্যুৎ ব্যবহার করছি। রাত ৮টার পরে অনেকটা অন্ধকার হয়ে যাওয়া কুতুবদিয়ার বিভিন্ন বাজার-মার্কেট এখন জেগে উঠেছে। আজকের দিনটির সাক্ষী হতে পরে নিজেকে গর্বিত মনে করছি। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন আশেক উল্লাহ রফিক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ার চেয়ারম্যান এডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক ও এডভোকেট ফরিদুল ইসলামের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
একজন সরকারি কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ ছাড়া কাজ করতে সমস্যা হয়। আজকে ভিন্ন পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। বিদ্যুৎ যে কত গুরুত্বপুর্ণ কুতুবদিয়াবাসী এখন বুঝতে পেরেছে। এখন সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে যাবে। প্রসার ঘটবে ব্যবসা-বাণিজ্যের।
২০২০ সালে দেশের শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনতে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘হাতিয়া দ্বীপ, নিঝুম দ্বীপ ও কুতুবদিয়া দ্বীপ শতভাগ নির্ভরযোগ্য ও টেকসই বিদ্যুতায়ন’ প্রকল্পটির মেয়াদকাল ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের আগেই দ্বীপটিতে পৌঁছে গেল জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ।
বৃহস্পতিবার পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ সরবরাহ কার্যক্রমের সূচনা করেন কুতুবদিয়া-মহেশখালীর সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক। সূচনাকালে উৎফুল্ল জনতার উদ্দেশ্যে আশেক উল্লাহ রফিক এমপি বলেন, আজ কুতুবদিয়াবাসী আরো একটি ইতিহাসের সাথে সংযুক্ত হল। জাতির জনকের কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতা ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর সহযোগীতায় এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হয়েছে। ঈদের আগের জাতীয় গ্রীডের থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে পরীক্ষামূলক বিতরণ শুরু হয়েছে। একই সাথে ফাইবার অপটিকের মাধ্যমে সংযুক্ত হয়েছে ইন্টারনেট সুবিধা।
এমপি আশেক আজকের দিনটি কুতুবদিয়াবাসীর গর্বের দিন উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী বলেই এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হযেছে। অচিরেই কুতুবদিয়ার প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে যাবে। কুতুবদিয়া এখন আর পিছিয়ে পড়বে না। এখন এগিয়ে যাওয়ার পালা। বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হওয়ায় কুতুবদিয়া ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। অর্থনৈতিকভাবে আরো সমৃদ্ধ হবে কুতুবদিয়া উপজেলা। শুধু এই প্রকল্প নয়, ১৯৯১ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের পরেই কুতুবদিয়াবাসীর পাশে এসে দাঁড়িয়ে ছিলেন তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখা হাসিনা। তিনি জাতীয় সংসদে কুতুবদিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনকে পুনর্বাসনের জন্য বিশ্ববাসীর কাছে আবেদন করেছিলেন।
প্রকল্পটির পরিচালক ও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. ফারুক আহমেদ বলেন, কুতুবদিয়ায় অভ্যন্তরীন লাইন সংযোগে অধিক সংখ্যক গাছ কাটার প্রয়োজনীতায় সংযোগের কাজ কিছুটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে সব সমস্যা কাটিয়ে উঠে কুতুবদিয়ায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন নিশ্চিত করা হবে। এসময় আরো বক্তব্য রাখেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আওরঙ্গজেব মাতবর, সাধারণ সম্পাদক হাজী আবু তাহের ও আবাসিক প্রতিনিধি আবুল হাসনাত। এসময় উপস্থিত ছিলেন সহকারী কমিশনার (ভুমি) জর্জ মিত্র চাকমা, কুতুবদিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মিজানুর রহমান, পেকুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ হায়দার, বড়ঘোপ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কালাম, আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর সিকদার, কৈয়ারবিলের চেয়ারম্যান আজমগীর মাতবর, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, উপজেলা ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।