গত ৫ এপ্রিল থেকে এক্সক্যাভেটর দিয়ে খাল খনন শুরু করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স শুভাঙ্কর চাকমা। তবে খাল খননের ফলে নৌপথ পুনরুদ্ধার হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হলেও বেদখলের কারণে খালটি সংকুচিতই থাকছে। সেজন্য অনুমোদনহীন স্থাপনা উচ্ছেদ না হলে খালটির পুরনো গতিপথ পুনরুদ্ধার হবে না বলছেন পরিবেশকর্মীরা। দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ ও স্থাপনা উচ্ছেদের দাবি জানিয়েছেন বিশিষ্টজনরা।
পাউবো রাঙ্গামাটি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) রাঙ্গামাটি জেলা শহরের তবলছড়ি এলাকায় মাঝেরবস্তি-তবলছড়ি বাজার সংযোগ খালটি খননের উদ্যোগ নেয়া হয়। ৩৫০ মিটার খাল খননে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২৬ লাখ টাকা। প্রকল্পটির অধীনে খালটি ১১ মিটার প্রশস্ত করে খনন করা হবে। গত ৫ এপ্রিল থেকে খাল খনন শুরু করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স শুভাঙ্কর চাকমা। আগামী ৩০ জুনের (তিন মাস) মধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে খাল খনন সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছে পাউবো।
বৃহস্পতিবার সরজমিন দেখা গেছে, এক্সক্যাভেটর দিয়ে খাল খননকাজ শুরু হয়েছে। শুরুর দিকে মাঝেরবস্তির এলাকার কাশেমবাজারের পেছন দিক থেকে খনন শুরু হয়েছে। একটি এক্সক্যাভেটর দিয়ে সরু করে খালের মাঝ বরাবর পানির গতিপথ চালুর চেষ্টা করছে পাউবো। তবে মোট ১১ মিটার প্রশস্ত করে খাল খনন করা হবে জানা গেছে। তবে খালের পাড়ে অবৈধভাবে ঘরবাড়ি ও দোকানপাট তৈরি করে বেদখলে নিয়েছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পাউবো রাঙ্গামাটির নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরা বণিক বার্তাকে বলেন, ‘স্থানীয়দের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে খালটি খননের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ মাস থেকে খননকাজ শুরু হয়েছে, আগামী জুনের মধ্যে কাজ সম্পন্ন হবে। এ কাজের আওতায় ১১ মিটার চওড়া করে মাঝেরবস্তি থেকে তবলছড়ি সেতুর নিচ পর্যন্ত ৩৫০ মিটার খাল খনন হবে। খনন করা মাটিগুলো সেখান থেকে তুলে নেয়া হবে। খননের পর মাটিগুলো ব্যবহারের জন্য একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে, যারা মাটি নিয়ে যাবেন।’
পরিবেশকর্মী ও সংগঠক সৈকত রঞ্জন চৌধুরী বলেন, ‘এমন খাল খনন সাময়িক স্বস্তিদায়ক মনে হলেও দীর্ঘমেয়াদি ভালো ফল পাওয়া যাবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত খালের প্রকৃত গতিপথ ঠিক করা না যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত ভালো ফল আসবে না। পাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে খালের প্রকৃত গতিপথ ঠিক করতে হবে, তবেই খননকাজের পূর্ণ সফলতা আসবে।’
খালপাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে স্থানীয় প্রশাসনকে খাল বেদখলের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জানিয়েছি। প্রশাসন বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখছে।’
সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন রাঙ্গামাটি জেলা সাধারণ সম্পাদক এম জিসান বখতেয়ার বলেন, ‘খালটি মাঝেরবস্তি কাশেমবাজার থেকে তবলছড়ি বাজার পর্যন্ত যাতায়াতের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। একসময় পুরনো রাঙ্গামাটির মানুষ এ খাল ব্যবহারের মাধ্যমে নানাভাবে উপকৃত হয়েছেন। তবে ভরাট না বেদখলের কারণে এটি মৃতপ্রায়। পানি উন্নয়ন বোর্ড খাল খননের যে উদ্যোগ নিয়েছে, এটি ইতিবাচক দিক। আমরা চাই এ কাজের যথাযথ বাস্তবায়ন হোক। একই সঙ্গে যারা বেদখলের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে খালটি পুনরুদ্ধারে প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।’
জানতে চাইলে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘খালপাড় অবৈধভাবে দখলের বিষয়টি আমাকে কেউ জানায়নি। আমার কাছে কেউ আসেননি, আমি বিষয়টি জানি না। তবু আমরা খোঁজ নিয়ে দেখব।’