টানা বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের কারণে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে রাঙ্গামাটির চার উপজেলায় আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতির দিকে। বৃষ্টিপাত কমায় রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি, জুরাছড়ি, রাজস্থলী ও বরকল উপজেলা নিম্নাঞ্চলগুলো থেকে আস্তে আস্তে পানি সরে যাওয়ায় এসব উপজেলাগুলোর দুর্গতরা আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ঘরে ফিরতে শুরু করেছে। তবে এবারের বন্যায় ১০ উপজেলায় ৩ হাজার ১৩৫ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
স্থানীয়রা জানান, টানা সাত দিনের বর্ষণে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বাঘাইছড়ি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে আকস্মিক বন্যা সৃষ্টি হয়। এতে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ বন্যা কবলিত হয়ে পড়েন। প্রায় এক হাজার পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। তবে বৃষ্টিপাত কমায় পানি কমতে শুরু করায় কিছুটা উন্নতি হয়েছে। দুর্গতদের মাঝে উপজেলা প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। সাজেক ভ্যালিতে আটকে পড়া দুইশত পর্যটক নিজ গন্তব্যে চলে গেছে। এর আগে দীঘিনালা-সাজেক-মারিশ্যা সড়কের কবাখালী স্থানে পানি উঠায় যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পর্যটকরা আটকে পড়েন।
সাজেক হিলভিউ রিসোর্টের সত্ত্বাধিকারী ইন্দ্র চাকমার জানান, কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে মারিশ্যা-দীঘিনালা সড়কের কবাখালী স্থানে পানি উঠায় সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে প্রায় দু’শ পর্যটক তিন দিন ধরে আটকে ছিলেন। পানি কমায় পর্যটকরা চলে গেছে।
এদিকে, জুরাছড়ি উপজেলা ৪টি ইউনিয়ন, বিলাইছড়ি উপজেলায় ফারুয়া ইউনিয়নে ও বরকল উপজেলায় কয়েকটি এলাকা ভারী বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে আকস্মিক বন্যা দেখা দেয়। এসব এলাকা থেকে ধীরে ধীরে পানি কমতে শুরু করেছে। সেখানেও দুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছে উপজেলা প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
রাঙ্গামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, জেলায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাব্য তালিকা করা হচ্ছে। এটি চূড়ান্ত তালিকা নয়। জেলার সব উপজেলা থেকে ক্ষয়ক্ষতি যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত হিসাব বলা যাবে।
জুরাছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সুরেশ কুমার চাকমা বলেন, জুরাছড়ি উপজেলায় যেসব স্থানে বন্যায় প্লাবিত হয়েছে সেসব এলাকা থেকে কিছুটা পানি কমতে শুরু করেছে। উপজেলায় ক্ষয়ক্ষতির এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় তালিকা তৈরি করে জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া যারা বর্তমানে আশ্রয়কেন্দ্রে আছে তাদেরকে উপজেলা প্রশাসন থেকে খাবারের ব্যবস্থা অব্যাহত রয়েছে।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমানা আক্তার বলেন, বাঘাইছড়ি উপজেলায় যেসব স্থান বন্যায় প্লাবিত হয়েছে সেসব স্থান থেকে ধীরে ধীরে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। এখনো উপজেলার কয়েকটি এলাকায় ৫০০ থেকে ৬০০ পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে প্রায় এক হাজারের অধিক পরিবার। এসব পরিবারের জন্য খাবার ব্যবস্থা করা হয়েছে।