রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি |
৪১ তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফলে রাঙ্গুনিয়ার ১১ জন শিক্ষার্থী সফলতা অর্জন করেছেন। এর মধ্যে একজন প্রশাসনিক, চারজন সাধারণ শিক্ষা, দুইজন বন ক্যাডারে, দুইজন গণপূর্ত ক্যাডারে, একজন বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে ও একজন বিসিএস পুলিশ ক্যাডার সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।
সাফল্য অর্জনকারী এই ১১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পোমরা ইউনিয়নের নাজিম উদ্দিন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে, একই ইউনিয়নের জাহামিনা জেরিন স্বর্ণা বিসিএস (বন) ক্যাডারে, দক্ষিণ রাজানগরের মো. ফোরকান সিকদার সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে, শিলকের প্রীতম বড়–য়া বিসিএস (বন) ক্যাডারে, চন্দ্রঘোনা কদমতলী ইউনিয়নের জয়া ধর মুমু সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে প্রশাসন ক্যাডারে, একই ইউনিয়নের ফাহিম সিকদার বিসিএস গণপূর্ত (ই/এম) ক্যাডারে, বেতাগীর সৈয়দা সাফিয়া সুলতানা বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে, একই ইউনিয়নের রাহিমা বেগম রুমি বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে, পদুয়ার স্বাগতা দাশগুপ্তা রশ্মি বিসিএস গণপূর্ত ক্যাডারে, মরিয়মনগরের বাসিন্দা বাংলাদেশ পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত আইজি (ফিন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) মো. শাহাব উদ্দীন কোরেশীর সন্তান আশিকুর রহমান বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে এবং রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার উর্মি সাহা বিসিএস (হেলথ) ক্যাডারে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছেন।
জানা যায়, বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত মো. নাজিম উদ্দীন রাঙ্গুনিয়ার উপজেলার পোমরা ইউনিয়নের আজিম নগরের নিবাসি আব্দুল কাদেরের সন্তান ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ২০০৭ সালে পোমরা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ২০০৯ সালে সৈয়দা সেলিমা কাদের চৌধুরী ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে চট্টগ্রাম বিশ্বিদ্যালয়ে ২০১০/১১ সেশনে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে ভর্তি হন।
২০১৪ সালে অনার্স ও ২০১৫ সালে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। দীর্ঘ দিন বিভিন্ন বেসরকারি চাকরি করে ২০১৯ সালে প্রকাশিত ৪১তম বিসিএসে আবেদন করেন এবং চাকরি ছেড়ে দিয়ে নামেন পড়ালেখায়। তিনি ৩ আগস্ট ২০২৩ সালে প্রকাশিত ৪১তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফলে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হন। বর্তমানে শিয়াল বুক্কা চৈতন্য চরণ সাহা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নব নিয়োগ প্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন।
অন্যদিকে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত মো. ফোরকান সিকদার দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের রাজাভুবন গ্রামের মো. কাঞ্চন সিকদারের সন্তান। তিনি ২০০৯ সালে রাজাভুবন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, হাজেরা তজু ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০১১ সালে এইচএসসি, ২০১১-১২ সেশনে বি.বি.এ(ব্যবস্থাপনা) এবং ২০১৫-১৬ সেশনে এম.বি.এ (মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা) করেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বর্তমানে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড এ অফিসার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন তিনি। বিসিএস (বন) ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত প্রীতম বড়–য়া শিলক ইউনিয়নের কৃতি সন্তান।
তিনি দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়ার শিলক বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, চুয়েট কলেজ থেকে এইচএসসি এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বনবিদ্যা বিভাগে অনার্স সম্পন্ন করেন। চন্দ্রঘোনা কদমতলী ইউনিয়নের মো. ফাহিম সিকদার বিসিএস গণপূর্ত (ই/এম) ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। তিনি কে পি এম হাই স্কুল থেকে এসএসসি, চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ থেকে এইচএসসি এবং চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করেন। বিসিএস সাধারণ (শিক্ষা) ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত সৈয়দা সাফিয়া সুলতানা শিবলী বেতাগী ইউনিয়নের সন্তান। তিনি রোটারি বেতাগী ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ইমাম গাজ্জালী ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা বিভাগে অনার্স সম্পন্ন করেন। বিসিএস (হেলথ) হিসেবে সুপারিশ প্রাপ্ত উর্মি সাহা রাঙ্গুনিয়া পৌরসভা ৬নং ওয়ার্ড গ্রামের সন্তান। তিনি রাঙ্গুনিয়া মজুমদারখীল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, চুযেট কলেজ থেকে এইচএসসি এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে ২৪তম বিডিএস সম্পন্ন করেন। বিসিএস সাধারণ (শিক্ষা) ক্যাডারে সুপারিশ প্রাপ্ত রাহিমা বেগম রুমী বেতাগী ইউনিয়নের সন্তান।
তিনি রোটারী বেতাগী ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ইমাম গাজ্জালী ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা বিভাগে অনার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। বিসিএস গণপূর্ত ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত স্বাগতা দাশগুপ্তা রশ্মি উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের স্নেহাশিস দাশগুপ্ত শিশির ও রীতা চৌধুরী দম্পতির সন্তান। তিনি ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এইচএসসি এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করেন। ৪০তম বিসিএস পরীক্ষায় প্রাণীসম্পদ ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে বর্তমানে ভোলা জেলার লালমোহন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হিসাবে কর্মরত জয়া ধর মুমু এবার ৪১তম বিসিএসে সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।
তিনি রাঙ্গুনিয়া আদর্শ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষক অমলেন্দু ধরের মেয়ে। মুমু কর্ণফুলী পেপার মিলস স্কুল এন্ড কলেজে (কেপিএম) ২০১০ সাল পর্যন্ত বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করেছেন। বিসিএস ক্যাডার (বন) সুপারিশপ্রাপ্ত পোমরা ইউনিয়নেরনের কৃতি সন্তান জাহামিনা জেরিন স্বর্ণা ফরিদপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, সারদা সুন্দরি মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি এবং শের ই বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স শেষ করে বিসিএসে সফলতা অর্জন করেন। এছাড়া মরিয়মনগরের সন্তান আশিকুর রহমান যিনি পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত আইজিপি শাহাব উদ্দীন কোরেশীর সন্তান। ৪০ তম বিসিএসে আনসার ক্যাডারে সহকারী পরিচালক / সহকারী জেলা কমান্ড্যান্ট/ব্যাটালিয়ন উপ-অধিনায়ক হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন।
এবার ৪১তম বিসিএসে বাবার মতো করেই পুলিশ ক্যাডার হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। তার বাবা শাহাব উদ্দিন কোরেশি ৮ম বিসিএস পুলিশ ক্যাডার হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন।
তাদের অভিনন্দন জানিয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা স্বজন কুমার তালুকদার বলেন, বিসিএসে উত্তীর্ণ এই শিক্ষার্থীরা রাঙ্গুনিযাবাসীকে গর্বিত করেছে। তাদের হাত ধরে আরও মেধাবী মুখ জাতীয় অঙ্গনে নিজেদের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখবেন এই প্রত্যাশা করি।