লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধি |
বান্দরবান জেলার লামা উপজেলায় বড় ভাইয়ের বিরুদ্ধে ছোট বোনের জমি জোর করে দখল চেষ্টা সহ নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে। বড় ভাই মো. ইউনুছ সর্দারের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের কাছে ছোট বোন হামিদা বেগম এ অভিযোগ করেন। ইউনুূছ সর্দার ও হামিদা বেগম সৎ ভাই বোন। ওয়ারিশ সূত্রে প্রাপ্ত জমি জবর দখল চেষ্টার হাত থেকে রক্ষা সহ বিভিন্ন হয়রানি থেকে রক্ষা পেতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন হামিদা বেগম। এদিকে জমি জবর দখলকে কেন্দ্র করে যে কোন মুহুর্তে দুই পক্ষের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
অভিযোগে জানা যায়, বেশ কয়েক বছর আগে ইউনুছ সর্দার ও হামিদা বেগমের মা-বাবা মারা যান। মা ছলেমা খাতুনের রেখে যাওয়া জমি নিয়ে ভাই বোনদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। এক পর্যায়ে হামিদা বেগমের আবেদনের প্রেক্ষিতে দুই পক্ষের মনোনিত প্রতিনিধি, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য সহ সার্ভেয়ার মা ছলেমা খাতুনের নামীয় জমি পরিমাপ পরিচিহ্নিত ও হিসাব করে ইউনুছ সর্দারের বাড়ির সামান্য পশ্চিমে খুটি পুতে ২৮৪নং ইয়াংছা মৌজার ৫৩নং হোল্ডিং এর ২৯ ও ৩০নং খতিয়ান থেকে ২৭.০৮ কড়া জমি ওযারিশ সূত্রে দুই বোন হামিদা বেগম ও সাজেদা বেগমকে বুঝিয়ে দেন সার্ভেয়ার আবদুল মালেক। পরবর্তীতে লোভের বশীভূত হয়ে গত ২০২২ সালের ১৮ ডিসেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ওয়ারিশ সূত্রে পাওয়া হামিদা বেগমের প্রাপ্ত অংশের ১৩ কড়া জমি দখলের উদ্দেশ্যে মো. ইউনুছ সর্দার তার জামাতা নুরুল কাদেরকে নিয়ে ট্রাক্টর লাগিয়ে চাষ করতে যান। খবর পেয়ে হামিদা বেগম ঘটনাস্থলে গিয়ে জমি চাষে বাধা প্রদান করলে জমি দখলে ব্যর্থ হন ইউনুূছ সর্দার। বড় ভাই ইউনুছ প্রভাবশালী হওয়ায় ভবিষ্যতে যে কোন মুহুর্তে জমি জবর দখল করতে পারেন, এমন আশঙ্কায় উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৪৫ ধারা নিষেধাজ্ঞা চেয়ে একটি মামলাও করেন হামিদা বেগম।
স্থানীয় পোয়াং বাড়ির স্থানীয় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন বাসিন্দা জানান, হামিদা বেগমের ওয়ারিশ সূত্রে প্রাপ্ত জমি পুণরায় দখলের চেষ্টা করছেন ইউনুছ সর্দার। বিষয়টি দু:খ জনক। কেউ যদি ইউনুছ সর্দারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলেন, তাদেরকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়।
কান্নাজড়িত কন্ঠে ভুক্তভোগী হামিদা বেগম জানান, মা বাবা মারা যাওয়ার পর পাহাড় থেকে অনেক কষ্টে লাকড়ি সংগ্রহ করে, তা বাজারে বিক্রির মাধ্যমে জীবন যাপন করে অনেক কষ্টে বড় হয়েছি। বড় ভাই সেই ছোট বেলা থেকে আমাদের ওয়ারিশি জমি ভোগ করে আসছেন। এত কষ্ট করি, তবুও আমাদেরকে ভোগ করতে দেন না। শুধু তাই নয়, আমার মায়ের নামীয় আর ২৫২নং হোল্ডিং এর পুরো ১ একর জমিও বড় ভাই ইউনুছ ও তার জামাতা নুরুল কাদের জবর দখল করে ভোগ করছেন। হামিদা বেগম আরও জানান, গত ৫ বছর আগে নগদ টাকার প্রয়োজন হলে বড় ভাই ইউনুছ সর্দারকে এক লক্ষ টাকা লাভের উপর এনে দিতে বলেন। ইউনুছ সর্দার হামিদা বেগমকে দেখিয়ে স্থানীয় নুরুচ্ছামাদের কাছ থেকে এক লক্ষ টাকা লাভের উপর নেন এবং এ টাকা এক বছর নিজে ব্যবহার করেন। পরবর্তীতে বিষয়টি জানাজানি হলে বিভিন্ন কিস্তিতে ওই টাকা হামিদা বেগমকে দেন ইউনুছ সর্দার। পরে এক বছরে টাকার লভ্যাংশ ৭০ হাজার টাকা হলে ইউনুূছ সর্দার হামিদার কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকা নেন। এ থেকেও ৪০ হাজার টাকা নিজে আত্মসাৎ করেন এবং বাকী ৩০ হাজার টাকা নুরুচ্ছামাদকে পরিশোধ করেন। এর আগেও ইউনুছ সর্দার ৫ আনা স্বর্ণের কান ফুল কৌশলে নিয়ে আত্মসাৎ করেন বলে জানান হামিদা বেগম।
তবে অভিযোগ অস্বীার করে অভিযুক্ত ইউনুছ সর্দার বলেন, ছোট বোন হামিদা বেগম বিভিন্ন খতিয়ানের চারটি অংশ থেকে ১৩ কড়া জমি ওয়ারিশ সূত্রে প্রাপ্ত হন। কিন্তু তিনি চার অংশের জমি এক খতিয়ানের এক চৌহদ্দি থেকে নিতে চাচ্ছেন। এভাবে নিতে চাইলে আমি যেখান থেকে জমি দিবো সেখান থেকে নিতে হবে। না হয়, চার অংশ থেকে খন্ড খন্ড করে নিতে হবে। লাভের অংশের টাকা আতœসাতের অভিযোগ সঠিক নয় বলেও জানান ইউনুছ সর্দার।
এ বিষয়ে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মো. জিয়াবুল হক জানায়, হামিদা বেগমের আবেদনের প্রেক্ষিতে ছলেমা খাতুনের নামীয় জমি সার্ভেয়ারের মাধ্যমে পরিমাপ পরিচিহ্নিত করে ওয়ারিশদের মাঝে ভাগ বন্টন করে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে ইউনুছ সর্দার বোনদের প্রাপ্ত জমি দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছেন বলে শুনেছি। বিষয়টি খুব দু:খ জনক। ##