1. admin@paharerkatha.com : paharer katha : paharer katha
  2. info@paharerkatha.com : পাহাড়ের কথা :
শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫, ০৬:৪২ অপরাহ্ন
সর্বশেষ:
আলীকদমে পারিবারিক কলহে বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা, হাসপাতালে ভর্তি ৩ জন লামায় বিকল্প কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে আরো ৫ জেলে পেলেন ২০টি উন্নত জাতের ছাগল লামায় এপেক্স ক্লাবের শিক্ষা সামগ্রী পেল শিক্ষার্থীরা লামায় জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস পালন আলীকদমে অবৈধভাবে পাহাড় কাটার দায়ে দুই জনকে জরিমানা বান্দরবানে ২১ কিলোমিটার হিল ম্যারাথন অনুষ্ঠিত লোহাগাড়া প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি ও সাউন্ড হেলথ হাসপাতালের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি বান্দরবানের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে খাদ্যশষ্য প্রদান করলেন আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য কেএস মং রাঙ্গামাটিতে তরুণী ধর্ষণ মামলায় এক যুবক আটক খাগড়াছড়িতে অপহরণের ৭ দিন পর চবি’র ৫ শিক্ষার্থী মুক্ত বিদ্যুৎ চলে গেলেই ঘুটঘুটে অন্ধকারে লামা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, রোগীদের দুর্ভোগ লামায় নিবন্ধিত জেলেরা পেলেন বিনামূল্যে উন্নত জাতের ছাগল লামায় ‘কার্প জাতীয় মাছের মিশ্র চাষ’ বিষয়ক রিফ্রেসার্স প্রশিক্ষণ সম্পন্ন লামায় “ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট বিষয়ক” প্রশিক্ষণ চকরিয়া ভূয়া নৌবাহিনী সদস্য পরচিয়ে প্রতারণায় এক দম্পতি গ্রপ্তোর

লামার সবুজ পাহাড়ে ‘কফি’ চাষের স্বপ্নধোঁয়ায় উড়ছে সম্ভাবনা

প্রতিবেদকের নাম:
  • প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ৭ মার্চ, ২০২৩
  • ৫০৫ বার পড়া হয়েছে

মো. নুরুল করিম আরমান |
বাংলাদেশে কফি চাষ শুনলে একসময় থমকে যেতে হত। চায়ের চেয়ে কফি জনপ্রিয় হলেও উচ্চ মূল্যের কারনে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারেনি কফি। চা খাইনি এমন মানুষ না থাকলেও কফি খাইনি এখনও এমন মানুষ দেশে রয়েছে। অথচ সেই কফি এখন বান্দরবানের লামা উপজেলার সবুজ পাহাড়ে সম্ভাবনার ফসল হয়ে উঠেছে। সরকারী বেসরকারী সহযোগিতা পেলে অচিরেই হয়তো দেশের চাহিদা মিটিয়ে বাংলাদেশের কফি উড়াল দেবে বিশ্বের নানা দেশে। অদুর ভবিষ্যতে উপজেলায় কৃষি শিল্পে বিপ্লব ঘটাবে উচ্চ মূল্যের পানীয় এ কফি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অধিনে কফি গবেষণা উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহন করার কারনে এখন কফি চাষে দিনদিন কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে। প্রথম প্রথম সখ করে দু একজন কফি চারা রোপন করলেও এখন উপজেলার প্রায় বাগাানের মালিকরা বাণিজ্যিকভাবে রোপন করছে কফি চারা। এ পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ে বাণিজ্যিক ও ব্যক্তিমালিকানায় প্রায় ৬৫ একর জায়গাজুড়ে ২৯৭৭৫টি কফি গাছ লাগানো হয়েছে বলে জানা গেছে। উচ্চ মূল্যের কফিচাষ সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে বাগানিকে।
কৃষি অফিসের তথ্যমতে, লামা উপজেলার প্রত্যেক ইউনিয়নের পাহাড়ে কিংবা পাহাড়ের ঢালে লাগানো হচ্ছে কফি চারা। এ পর্যন্ত বাণিজ্যিক ও ব্যক্তিমালিকানায় প্রায় ৬৫ একর জায়গাজুড়ে ২৯৭৭৫টি কফি গাছ লাগানো হয়েছে। ব্যক্তি উদ্যোগে ২০১৮-২১ সাল পর্যন্ত ৭ জন কৃষক, ২০২১ সালে বাণিজ্যিকভাবে ৬৬জন কৃষক কফি চারা রোপন করেছেন। হর্টিকালচার ও ডিএই এর মাধ্যমে ৬৬জন কৃষককে চারা, সার, নেট ও নগদ অর্থ দিয়ে সহায়তা করা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় ২.৫ একর করে ৫টি বাণিজ্যিক ও ৫০ শতক করে ৫০টি কফিজাত প্রযুক্তি প্রদশনী দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়নের দু একটি কফি বাগান ঘুরে দেখা যায়, কোথাও সারিবদ্ধভাবে, কোথাও গাছের ফাঁকে ফাঁকে আবার কোথাও পাহাড়ের উঁচুনিচু ঢালুতে কফি চারা রোপন করেছে বাগানিরা। কোথাও কফি গাছ ৩ থেকে ৪ফুট লম্বা আবার কোথাও বয়স এক সপ্তাহ হতে এক মাস হয়েছে। কোন কোন গাছে ফল আসতেও দেখা যায়। তবে তা পরিপক্ব হয়নি এখনও। কোন কোন বাগানি ইতিমধ্যে কফি উৎপাদন করে এখন বাজারজাতও করছেন। ঝাঁকড়ানো সবুজ পাতা আর ফলন ইঙ্গিত করছে প্রত্যন্ত অঞ্চলে একদিন অর্থনৈতিক মুক্তির সম্ভাবনার নব দিগন্ত হবে কফি চাষ।
উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়নের ব্রীকফিল্ড এলাকায় অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক (প্রাথমিক) প্রমোদ চন্দ্র বড়–য়ার বাগান ঘুরে দেখা যায়, তার সৃজিত ফলজ বাগানের ভিতর ২ একর জায়গায় ১২২৫টি কফি চারা লাগিয়েছেন। এক সপ্তাহ আগে এ চারা রোপন করেন তিনি। পাশের আখিরাম পাড়ায় আরেকটি বাগান ঘুরে দেখা যায়, ৪ থেকে ৫ ফুট লম্বা হয়েছে কফি গাছ। প্রায় গাছে ফলও এসেছে।
নতুন উদ্যোক্তা উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বাথোয়াইচিং মার্মা প্রথমে আম বাগান সৃজন করলে তা দেখে এলাকার অনেকে আম বাগান করতে আগ্রহী হয়ে উঠেন। তেমনি কফি চাষের উজ্জল সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করে কফি চাষে কৃষকদের মাঝে আগ্রহ সৃষ্টি করতে ৪ হাজার কফি চারা লাগান তিনি।
এ্যাসোসিয়েশন অব ড্যাবটিস্টের কফি এক্সপার্ট প্রশিক্ষক তৈদরাম ত্রিপুরা বলেন, একটি কফি চারার মূল্য ৩০ থেকে ৫০ টাকা। এরা ৭০ থেকে ৮০ বছর পর্যন্ত বাঁচে। ৩০ থেকে ৪০ বছর পর্যন্ত ফলন দেয়।এরপর ঢালপালা ছেটে মাতৃ গাছের একফুট উপর থেকে তির্ডকভাবে কেটে দিলে পুণরায় ফলন পাওয়া যায়। ১টি গাছ প্রতিবছর ১০ থেকে ১৫ কেজি ফলন দেয়। এর বাজার মূল্য প্রতি কেজি ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা।কফি চাষীদের জন্য সুখবর হচ্ছে দেশীয় ও বিশ্ববাজারে কফির মূল্য একই থাকে। ফলে এর কোন সিন্ডিকেট থাকেনা। দেশে একমাত্র কফি বিক্রয়কেন্দ্র প্রতিষ্ঠান হচ্ছে নর্দান এন্ড কফি রোষ্টার কোম্পানী।
লামা উজেলার প্রথম উদ্যোক্তা তৈদুরাম প্রথমে ৩ একর জায়গায় সাড়ে তিন হাজার, পরে আরো ১২ হাজার কফি চারা লাগান। তার চারার বয়স ৪ বছর হয়েছে। ৩ বছরের মাথায় কিছু কিছু গাছে ফলনও আসে। আবাদি অনাবাদি জমি; দুটোতেই কফি চাষ করা যায়। কফি ছায়া সহনীয় গাছ বিধায় চাষীদের জন্য সুবিধা হচ্ছে কফি বাগানের ভিতর অন্যান্য বাগান কিংবা অন্যান্য বাগানের ভিতর কফি বাগান করা যায়। ফলে অন্যান্য চাষের চেয়ে কফি চাষে কৃষকের লাভের সম্ভাবনা বেশি বলে জানান তৈদুরাম। শুধু গজালিয়া ইউনিয়ন নয়, উপজেলার সব কটি ইউনিয়নের পাহাড়ে কফি চাষ শুরু করেছে বাগানিরা।
কৃষি বিভাগের অভিমত চা গুল্মজাতীয় গাছ, কিন্তু কফি একদম গাছ গোত্রেরই। কফি গাছ ছায়া সহ্য করতে পারে। তাই বড় গাছ কিংবা ফলজ গাছের ছায়তলে বেড়ে উঠতে কফি গাছের কোন সমস্যা হয় না। সাধারণত পতিত জমিতে কফি চাষ বাড়ানো গেলে অন্য যেকোনো ফসলের চেয়ে লাভ বেশি। পানি নিষ্কাশনযুক্ত যেকোন উঁচু জমিতে কফি চাষ করা সম্ভব। দেশে রোবাস্টা ও অ্যারাবিকা— দুই জাতের কফি চাষ হচ্ছে। তবে উপজেলায় রোবাস্টা জাতের কফির চাষ বেশি।
এ বিষয়ে লামা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রতন চন্দ্র বর্মন বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অধিনে কফি গবেষণা উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহন করায় উপজেলায় কফি চাষের প্রতি বাগানিরা আগ্রহী হয়ে উঠেছে। এ প্রকল্পের আওতায় গত দুই অর্থ বছরে বাগানিদের ১১৫৬৫টি চারাসহ সার, নেট, নগদ অর্থ ও প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, কফি চাষের উপযুক্ত পরিবেশ হচ্ছে পাহাড়ি অঞ্চল। পাহাড়ের অনাবাদি ও আবাদি জমি কফি চাষের মাধ্যমে কাজে লাগাতে পারলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে বাগানিরা। সেইসাথে অর্থকরী ফসল হিসেবে দেশের অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হবে। বিপ্লব ঘটবে কৃষি শিল্পে। যথাযথ এ চাষে বাগানিদের ভাগ্যের চাকা ঘুরবে বলেও জানান কৃষি কর্মকর্তা রতন বর্মন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট