1. admin@paharerkatha.com : paharer katha : paharer katha
  2. info@paharerkatha.com : পাহাড়ের কথা :
শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫, ০৮:২২ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ:
আলীকদমে পারিবারিক কলহে বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা, হাসপাতালে ভর্তি ৩ জন লামায় বিকল্প কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে আরো ৫ জেলে পেলেন ২০টি উন্নত জাতের ছাগল লামায় এপেক্স ক্লাবের শিক্ষা সামগ্রী পেল শিক্ষার্থীরা লামায় জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস পালন আলীকদমে অবৈধভাবে পাহাড় কাটার দায়ে দুই জনকে জরিমানা বান্দরবানে ২১ কিলোমিটার হিল ম্যারাথন অনুষ্ঠিত লোহাগাড়া প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি ও সাউন্ড হেলথ হাসপাতালের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি বান্দরবানের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে খাদ্যশষ্য প্রদান করলেন আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য কেএস মং রাঙ্গামাটিতে তরুণী ধর্ষণ মামলায় এক যুবক আটক খাগড়াছড়িতে অপহরণের ৭ দিন পর চবি’র ৫ শিক্ষার্থী মুক্ত বিদ্যুৎ চলে গেলেই ঘুটঘুটে অন্ধকারে লামা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, রোগীদের দুর্ভোগ লামায় নিবন্ধিত জেলেরা পেলেন বিনামূল্যে উন্নত জাতের ছাগল লামায় ‘কার্প জাতীয় মাছের মিশ্র চাষ’ বিষয়ক রিফ্রেসার্স প্রশিক্ষণ সম্পন্ন লামায় “ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট বিষয়ক” প্রশিক্ষণ চকরিয়া ভূয়া নৌবাহিনী সদস্য পরচিয়ে প্রতারণায় এক দম্পতি গ্রপ্তোর

লামায় ঔষধীগুন সম্পন্ন ‘চিয়া’ বীজ চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা : তামাকের চেয়েও তিনগুন লাভ এ চাষে

প্রতিবেদকের নাম:
  • প্রকাশিত: শুক্রবার, ৩ মার্চ, ২০২৩
  • ৪৮৬ বার পড়া হয়েছে

মো. নুরুল করিম আরমান ।
মরুভূমিতে জন্মানো সালভিয়া হিসপানিকা উদ্ভিদের বীজ হচ্ছে ‘চিয়া’। ঔষধি গুণসম্পন্ন এ ‘চিয়া’ বীজ একসময় শুধু মেক্সিকো ও আমেরিকার চাষ হতো। চিয়া’র বৈজ্ঞানিক নাম সালভিয়া হিসপানিকা। সম্প্রতি চিয়া বীজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারের মাধ্যমে দেশে ব্যাপক হারে পরিচিতি লাভ করে। আর এ প্রচারনা থেকে এবারই প্রথম তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে বান্দরবান জেলার লামা পৌরসভা এলাকার মধুঝিরি গ্রামে পরীক্ষামূলকভাবে চিয়া চাষ শুরু করা হয়। বেসরকারী সংস্থা কারিতাস বাংলাদেশের এগ্রো ইকোলজি প্রকল্প-২ এর মাঠ কর্মকর্তা মো. মামুন সিকদারের উদ্বুদ্ধকরণে ও সার্বিক সহযোগিতায় কৃষক মোহর আলী ২০ শতক জমিতে এ ‘চিয়া’ চাষ করেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও ভালো হয়েছে। তাই কৃষক মোহর আলী এখন তামাকের চেয়ে তিনগুন লাভের স্বপ্ন দেখছেন এ ‘চিয়া’ চাষে। মোহর আলী লামা পৌরসভা এলাকার মধুঝিরি গ্রামের বাসিন্দা ও একজন আনসার ভিডিপি’র সদস্যও বটে। এক সময় তিনি তামাক চাষ করতেন। ‘চিয়া’ চাষে তিনগুন লাভ হওয়ায় শুধু কৃষক মোহর আলী নয়, আশপাশের অন্যসব কৃষকও এ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। আগামী মৌসুমে এসব কৃষকও চিয়া চাষ করবেন জানান এ প্রতিবেদককে। পরিবেশ বান্ধব সম্ভাবনাময়ী এ চাষাবাদ বান্দরবান জেলাসহ তিন পার্বত্য জেলায় ছড়িয়ে দেয়া গেলে আমদানী ব্যয় কমানোর পাশাপাশি কৃষকরা বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারবে বলে আশা করছেন কৃষি বিভাগ।
জানা যায়, ‘চিয়া’ সীডের আদি জন্মস্থান সেন্ট্রাল আমেরিকা। সেখানকার প্রাচীন আদিবাসীরা খাদ্যতালিকায় থাকা চিয়া বীজকে সোনার থেকেও মূল্যবান বলে মনে করতেন। অতীতে মায়া সভ্যতার গুরুত্বপূর্ণ খাবার ছিল ‘চিয়া’ বীজ। বর্তমানে চিয়া সিড শুধু ওজন কমানোর জন্য বা ডায়েটের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে না, নিরপেক্ষ স্বাদের কারণে ‘চিয়া’ সিড সব ধরনের খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ার উপযুক্ত। সব ধরনের আবহাওয়ায় জন্মানো ‘চিয়া’ বীজ দেখতে সাদা ও কালো রঙের তিলের মতো ছোট হয়ে থাকে। অনেকেই ‘চিয়া’ সীডকে তোকমা বলে ভুল করে থাকে। দেখতে প্রায় একই রকম হলেও জন্মস্থান ও পুষ্টিগুণের দিক থেকে রয়েছে কিছু পার্থক্য। ‘চিয়া’ সাধারণত তিন মাসের ফসল। এর আয়ুকাল ৯০ থেকে ১০০ দিন। বছরের অক্টোবর মাসে বীজ বপন করতে হয়। ২০ শতকে মাত্র ৬০০শ গ্রাম বীজ লাগে। চাষের পদ্ধতি খুব সহজ। তেমন একটা যতœ নিতে হয়না। রোগবালাই কম ও আগাছা বাচাই করতে হয় না, এ গাছ গরু ছাগলেও খায় না। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বছরব্যাপী ফল উৎপাদন প্রকল্প কর্মকর্তা কৃষিবিদ ড. মেহেদী মাসুদ কানাডা থেকে প্রথম ‘চিয়া’ বীজ দেশে আনেন বলে জানা গেছে।
সরেজমিন কৃষক মনহোর আলীর ‘চিয়া’ ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, ২০ শতক জমিতে ‘চিয়া’ বীজের চাষাবাদ করেছেন। এতে সর্বমোট খরচ হয় ১৫ হাজার টাকা। ইতোমধ্যে এ জমিতে গাছ বড় হয়ে ফুল ও ফল ধরেছে। প্রতিটি গাছের সাথে অসংখ্য ফুল ও ফল রয়েছে। লম্বা আকৃতির ‘চিয়া’ সীডের গাছগুলো বাতাসে দোল খাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকার ‘চিয়া’ বীজ উৎপাদনের আশা করছেন কৃষক মোহর আলী। তিনি বলেন, খাবার গুণের পাশাপাশি পুষ্টি চাহিদা পূরণ করার লক্ষ্যে কারিতাসের মাঠ কর্মকর্তা মামুন সিকদারের পরামর্শে ও সার্বিক তত্বাবধানে সুপার ফুড ‘চিয়া’ চাষ করি। প্রথম অবস্থায় বাজারজাত নিয়ে চিন্তিত ছিলাম। কিন্তু এখন জমি থেকেই বিক্রি হয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে। অগ্রিম ‘চিয়া’ বীজ কিনতে চাচ্ছেন আশপাশের কৃষকরা। প্রতি কেজি ‘চিয়া’ সিড প্রায় ১২০০ টাকায় বিক্রি করা যাবে। তিনি আরও বলেন, এই শস্যে কোনো রোগ নেই। তাই কোনো কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় না। উৎপাদনে খরচ খুব কম। পরিবেশেরও ক্ষতি হয়না। এই শস্য বীজ থেকে শুরু করে ফসল ঘরে তোলা পর্যন্ত ১০০ থেকে ১২০ দিন লাগে। যা তামাক চাষের চেয়ে পরিশ্রম ও খরচ অনেক কম। তাছাড়া তুলনামূলকভাবে তামাকের চেয়ে অনেকগুন বেশি লাভ হবে বলে আশা করছি। আমার ২০ শতক জমিতে প্রায় ১২০ কেজি ‘চিয়া’ বীজ পাওয়া যাবে। যার আনুমানিক মূল্য ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। এতে খরচ বাদে লাভ হবে ১ লক্ষ টাকা। অন্যদিকে একই পরিমাণ জমিতে তামাক চাষ করলে খরচ হয় ৩০ হাজার টাকা। ভালো ফলন হলে উৎপাদিত তামাক বিক্রি করে পাওয়া যায় ৫০ হাজার টাকা। এতে লাভ হয় সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা। রুপসীপাড়া ইউনিয়নের শীলেরতুয়া পাড়ার কৃষক নুরুল ইসলাম বলেন, আগে চিয়া বীজ চিনতাম না। কৃষক মনহোর আলীর চাষ দেখে আর সম্প্রতি ফেসবুকে চিয়া’র প্রচারনা দেখে উদ্বুদ্ধ হই। আগামী মৌসুমে আমিও চিয়া চাষ করবো। তাই কৃষক মনহোর আলীর কাছে ১ কেজি চিয়া বীজের অর্ডার করছি।
এদিকে কারিতাস এগ্রো ইকোলজি প্রকল্পের মাঠ কর্মকর্তা মো. মামুন সিকদার জানান, ‘চিয়া’ বীজ সাধারণত তিন মাসের ফসল। বছরের অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহে বীজ বপন করতে হয়। ২০ শতকের জমিতে মাত্র ৬০০ গ্রাম বীজ লাগে। চাষ পদ্ধতিও খুব সহজ। প্রয়োজন অনুপাতে ২-৩ বার সেচ ও সার প্রয়োগ করতে হয়। অনেকটা তিল তিষি চাষের মতোই ‘চিয়া’ বীজ। যেকোনো চাষী বা কৃষক এটি চাষ করতে পারবেন। প্রতি বিঘা জমিতে সব মিলে খরচ হবে মাত্র সাত হাজার টাকা। পতিত জমি ও ছোট বাগানের জমিতে চাষ করা যায়। এক হাজার টাকা বাজারদরে উৎপাদিত চিয়া বিঘাপ্রতি ১ লাখ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করা সম্ভব। যা তামাকের তুলনায় তিনগুন লাভ। তিনি বলেন, এ চাষাবাদে চাষী মোহর আলীকে সার্বক্ষনিক মনিটরিংসহ কৃষক মনোহর আলীকে সব ধরনের কারিগরি সহযোগিতা দিচ্ছি। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় মাঠে গাছের ফুল ও ফল ভাল হয়েছে। আশা করছি এ চাষাবাদে কৃষকরা তামাকের চেয়ে তিনগুন বেশি ভাল করতে পারবেন। সম্ভাবনাময়ী এ চাষাবাদ ছড়িয়ে দেয়া গেলে আমদানী ব্যয় কমানোর পাশাপাশি কৃষকরা বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারবে বলে আশা করা যাচ্ছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাইন উদ্দীন মোরর্শেদ জানান, সুপার ফুড ‘চিয়া’ দেহের শক্তি ও কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী, ওজন কমানো, রক্তে সুগার স্বাভাবিক রাখা এবং হাড়ের ক্ষয় রোধ করে। প্রচুর পরিমাণে ফাইবার সমৃদ্ধ ‘চিয়া’ সিড মলাশয় পরিষ্কার রাখে, ফলে কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। তিনি আরও জানান, ‘চিয়া’ সিডে থাকা অ্যামিনো অ্যাসিড ভালো ঘুম হতে সাহায্য করে। শরীরের শর্করার মাত্রা কমিয়ে হজমে সহায়তা করে। এতে থাকা উচ্চমাত্রার ক্যালসিয়াম হাঁটু ও জয়েন্টের ব্যথা দূর করে। এটি ত্বক, চুল ও নখ সুন্দর রাখতে সহায়তা করে। তিনি বলেন, বর্তমানে ‘চিয়া’ সিড সব ধরনের খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ার উপযুক্ত। ‘চিয়া’ সীডে ওমেগা—, ফাইবার, ম্যাংগানিজ, ফসফরাস, প্রোটিন, ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেটসহ পাশাপাশি এতে আছে ভিটামিন বি, থায়ামিন, নিয়াসিন, আয়রণ, দস্তা, ফ্যাটিক এসিড, ম্যাগনেসিয়াম।
এ বিষয়ে লামা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রতন চন্দ্র বর্মন জানায়, সব ধরনের আবহাওয়ায় জন্মানো ‘চিয়া’ বীজ দেখতে সাদা ও কালো রঙের তিলের মতো ছোট হয়ে থাকে। অনেকেই চিয়া সিডকে তোকমা বলে ভুল করে থাকে। দেখতে প্রায় একই রকম হলেও জন্মস্থান ও পুষ্টিগুণের দিক থেকে রয়েছে কিছু পার্থক্য। ‘চিয়া’ সাধারণত তিন মাসের ফসল। প্রচার-প্রচারণা ও চাহিদার কারণে ইতোমধ্যে বাংলাদেশের বাজারে প্রকার ভেদে ১৩শ’ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা কেজি দরে ‘চিয়া’ সীড বীজ বিক্রি হচ্ছে। যা সাধারণত বিদেশে থেকে আমদানি করা হয়ে থাকে। এ চাষ ছড়িয়ে দেয়া গেলে আমদানী ব্যয় কমানোর পাশাপাশি কৃষকরা বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারবেন। কৃষি অফিস ‘চিয়া’ চাষ সম্প্রসারণে ভবিষ্যতে কৃষকদের বিনা মূল্যে বীজ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সহায়তায় প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানান কৃষি কর্মকর্তা রতন চন্দ্র বর্মন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট