ইকবাল ফারুক, চকরিয়া |
চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের বারবাকিয়া রেঞ্জের আওতাধীন চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের পহরচাঁদা বনবিটের মছনিয়াকাটা এলাকায় সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পাহাড় কেটে মাটি লুটের মহৌসব চলছে। স্থানীয় কিছু ভূমিদস্যু বন বিভাগের লোকজনের সাথে আঁতাত করে রাতের আঁধারে স্কেভেটর দিয়ে পাহাড় কেটে ছোট-বড় ডাম্পার গাড়ি দিয়ে তা বিভিন্নস্থানে পাচার করে দিচ্ছে। পাহাড় কেটে অব্যাহতভাবে মাটি লুটের কারণে সবুজ বনাঞ্চলে ভরপুর পাহাড়গুলো এখন বিরাণভূমিতে পরিণত হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, সরকারি বনাঞ্চলের পাহাড় কেটে অব্যাহতভাবে মাটি লুটের ঘটনা ঘটলেও এতে জড়িত চক্রের বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন ধরনের অভিযান দেখা যায়নি। আর বন বিভাগের পক্ষ থেকে দায়সারাভাবে চারটি মামলা দায়ের করা হলেও এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন পাহাড় কেটে মাটি লুটের সাথে জড়িত প্রভাবশালী ভূমিদস্যু চক্রটি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, চকরিয়া উপজেলার বরইতলী-পেকুয়া-মগনামা সড়কের মছনিয়াকাটা স্টেশনের পশ্চিমাংশে সড়কের সাথে লাগোয়া দক্ষিণাংশের সরকারি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের দুইটি বিশাল আকারের পাহাড় কেটে সাবাড় করে দেয়া হয়েছে। প্রতি রাতে বেশ কয়েকটি স্কেভেটর দিয়ে এসব পাহাড় কেটে বিভিন্ন ছোট বড় ডাম্পার দিয়ে মাটি লুট করে নিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় কতিপয় ভূমিদস্যু চক্র। আর দিনের বেলায় লোকজনের নজর এড়াতে পাহাড় কাটার রাস্তা ও সম্মুখ অংশে বড় বড় পলিথিন ও তেরপাল দিয়ে তা ঢেকে রাখা হয়েছে। যে সব জায়গায় পাহাড় কাটার ফলে সমতল হয়ে গেছে সেখানে রাতারাতি গড়ে তোলা হয়েছে আবাসস্থল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা জানায়, বরইতলী ইউনিয়নের স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. শওকত ও মাটি ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত নাছির উদ্দিন এ পাহাড় কাটার সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। তারা স্থানীয় বন বিভাগের লোকজনের সাথে আঁতাত করে রাতের আঁধারে বড় বড় পাহাড়গুলো কেটে সাবাড় করে দিচ্ছেন।
শওকত মেম্বার ও নাছির উদ্দিন স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় মামলা হামলার ভয়ে স্থানীয় লোকজনও তাদের এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন না। ফলে তারা বিনা বাধায় কেটে সাবাড় করে দিচ্ছে সরকারি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের এসব পাহাড়।
পাহাড় কাটার দায় স্বীকার করে ইউপি সদস্য মো. শওকত বলেন, ‘স্থানীয় জনগণের দাবির প্রেক্ষিতেই পাহাড়টি কেটে সমান করা হয়েছে। পাহাড়টির দু’পাশে ইট বিছানো সড়ক আছে। এই অংশটি উঁচু হওয়ায় কেটে সমান করেছি। এখানে আমার ব্যক্তিস্বার্থ নয়, জনগণের স্বার্থ জড়িত।’ মাটি বিক্রির বিষয়ে শওকত মেম্বার বলেন, ‘আমরা কিছু মসজিদ-মাদ্রাসায় মাটিগুলো দিয়েছি। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের হুজুররা আমাদের সামান্য টাকাই দিয়েছেন।’
পাহাড় কাটার সাথে জড়িত স্কেভেটর মালিক নাছির উদ্দিন বলেন, ‘পাহাড়গুলোতে অনেক গাছ ছিল। সেগুলো আগেই কাটা হয়ে গেছে। আমরা শুধু সড়ক বানানোর জন্য পাহাড়ের কিছু অংশ কাটছি। মাটি রাখার জায়গা না থাকায় অন্য জায়গায় মাটিগুলো সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘পাহাড় কেটে সড়ক নির্মাণের ব্যাপারে স্থানীয় বনবিট কর্মকর্তা শাহ আলমের সাথে কথা বলা হয়েছে। তার পক্ষ থেকে সবুজ সংকেত পেয়েই আমরা এ কাজ করেছি।’
চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের বারবাকিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা হাবিবুল হক বলেন, ‘বনবিভাগের পক্ষ থেকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। পাহাড় কাটার সাথে স্থানীয় ইউপি সদস্য শওকত ও নাছির উদ্দিনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার পর এ ঘটনায় পৃথক চারটি মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলায় দুইজন গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে হাজতবাস করছেন।’