বান্দরবান প্রতিনিধি |
বান্দরবানের থানচি উপজেলার সীমান্ত অঞ্চলের বড় মদকে ২০১৯-২১ অর্থ বছরে নির্মিত ২ কোটি টাকা ব্যয়ে সাঙ্গু নদীর উপর নির্মিত ঝুলন্ত সেতুটি ভেঙ্গে গেছে। মিয়ানমার সীমান্তবর্তী সাঙ্গু নদীর দুই পাড়ের প্রায় ৫ হাজার মানুষের মধ্যে সেতুবন্ধনকারী এই সেতুটি দেশ-বিদেশের পর্যটকদের জন্যও ছিল আকর্ষণীয়। কিন্তু মাত্র ২ বছর পার হতে না হতেই সাম্প্রতিক বন্যা ও পানির স্রোতে ভেঙ্গে গেছে সেতুটি। নির্মাণ কাজে নিম্নমাণের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার, নির্মাণের সময় সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীর অনুপস্থিতি, বিভিন্ন প্রকৌশলগত ত্রæটির কারণে এটি ভেঙ্গেছে বলে দাবি স্থানীয়দের।
পার্বত্য জেলা পরিষদের তথ্যমতে, ২০১৯-২১ এই দুই অর্থবছরে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রকৌশল বিভাগের উদ্যোগে ১ কোটি ৯৯ লক্ষ টাকা ব্যয়ে থানচির রেমাক্রী ইউনিয়নের বড় মদকে সাঙ্গু নদীর উপর নির্মাণ করা হয় ৮০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১.৮ মিটার প্রস্থের দৃষ্টিনন্দন এ ঝুলন্ত সেতুটি। এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ঝুলন্ত সেতু হিসেবেও বিবেচিত। মি:ইউটি মং ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সের নামে ঠিকাদার মংউয়েনু মারমা ও থানচির রেমাক্রি ইউপি চেয়ারম্যান মুইশৈথুই মারমা রনি এই সেতু নির্মাণে সম্পৃক্ত ছিলেন।
স্থানীয়রা জানায়, সাঙ্গু নদীতে বর্ষাকালে পানি যখন বেড়ে যায় তখন দুই পাড়ের মানুষ একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে পারে না। বড় মদক বাজারের বাসিন্দা উবামং মারমা জানান, মাত্র বছর দুয়েক আগে বড় মদকে সেতুটি করার পর স্থানীয়রা অনেক খুশি হয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানসহ আওয়ামী লীগের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু ২ বছর না পেরুতেই ভেঙ্গে যাওয়ায় তারা সকলেই হতাশ। রেমাক্রি ইউপি চেয়ারম্যান ও ঝুলন্ত সেতু নির্মাণ ঠিকাদার মুইশৈথুই মারমা রনি বলেন, এবারের বন্যায় পানির সাথে বড় বড় গাছ আর বাঁশ ভেঁসে এসে সেতুতে আটকে যায়। এগুলোর ভার সইতে না পেরেই সেতুটি বেঁকে গেছে। তবে পিলার ভাঙ্গার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি। সেতুটি ভাঙ্গার মূল কারণ হিসেবে বন্যাকে দায়ী করে ঠিকাদার মংউয়েনু মারমা বলেন, কাজটি করার সময় কোনো অনিয়ম করা হয়নি। এবার বেশি বন্যা হয়েছে। তাই পানির চাপ সইতে না পেরে সেতুটি ভেঙ্গে গেছে।
সেতুতে কোনো ধরনের অনিয়ম হয়নি জানিয়ে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জিয়াউর রহমান বলেন, থানচি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকার কারণে এখনো সেতুটি দেখতে যেতে পারিনি। তবে এবার যে বন্যা হয়েছে তা অতীতে দেখা যায়নি। মূলত বন্যার পানির স্রোতে ভাসমান নানা ধরণের গাছের ভার বহন করতে না পেরে সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে এটি সংস্কারের জন্য প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। আশা করছি বরাদ্দ পেলে সেতুটি সংস্কার কাজ শুরু করতে পারবো।