লামা প্রতিনিধি |
যেখানে পরিবেশ রক্ষায় গাছ লাগানোর নির্দেশনা রয়েছে, সেখানে বান্দরবান জেলার লামা উপজেলায় আবদুল খালেক নামের এক গরীব অসহায় বৃদ্ধের বহু কষ্টার্জিত সৃজিত বাগান থেকে প্রতিপক্ষের লোকজন জোর পূর্বক ৩০ লাখ টাকার বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুধু তায় নয়, গাছ কেটে নিয়ে যাওয়ার পর এখন ওই জায়গা জবর দখলে নিতে রাতারাতি পাহাড় কেটে একটি মাটির ও একটি টিনের ঘর নির্মাণও করেন প্রতিপক্ষ। উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি গিলাতলী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বৃদ্ধ আবদুল খালেকের ছেলে এরশাদ মিয়া বাদী হয়ে প্রতিপক্ষ মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, তাজুল ইসলামের ছেলে মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, জিয়াবুল হোসেন ও বেলাল হোসেন সহ অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে উপজেলা সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজদারী মামলা করেন। এ প্রেক্ষিতে আদালতের জিআরও আনোয়ারুল ইসলাম উভয় পক্ষকে বিরোধপূর্ণ জাযগায় কোন ধরণের স্থাপনা নির্মাণ বা কাজ না করতে নিষেধ করেন। কিন্তু বিবাদী মোহাম্মদ তাজুল ইসলামরা নিষেধা উপেক্ষা করে পুণরায় জায়গার উপর মাটির ঘর নির্মাণ কাজ করেন। বিবাদীদের হাত থেকে জমি ও বাগানের গাছ রক্ষায় প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন ভুক্তভোগী আবদুল খালেক ও ছেলে এরশাদ মিয়ার পরিবারের সদস্যরা।
অভিযোগে জানা যায়, উপজেলার ২৮৬নং ফাঁসিয়াখালী মৌজায় বৃদ্ধ আবদুল খালেকের নামে ৫১৬নং হোল্ডিং এর দাগ নং ৩১৭৬, ৩১৭৭, ৩১৭৮, ৩১৭৯ ও ৩১৮০ এর আন্দরে দুই একর প্রথম শ্রেণীর জমি আছে। এছাড়া আবদুল খালেকের ছেলে এরশাদ মিয়ার নামেও একই মৌজার আর/৭৪৮নং হোল্ডিং মূলে চার এক দ্বিতীয় শ্রেণীর ও সিট নং ১১, দাগ নং ৩১৭১ নং মূলে আরও এক একর প্রথম শ্রেণীর জমি ও দুই একর তৃতীয় শ্রেণীর জমি রয়েছে। ১৯৮০ সাল থেকে এসব হোল্ডিং ও দাগের জায়গা বহু কায়িক পরিশ্রম ও অর্থ ব্যয়ে আবাদ করত: বসতঘর নির্মাণসহ ফলজ বনজ বাগান সৃজন করে পরিবার পরিজন নিয়ে ভোগ করে আসছেন। এ জমি ছাড়া তাদের আর কোন জমি নেই। গত বছর থেকে আবদুল খালেক ও এরশাদ মিয়ার জায়গার উপর লোলুপ দৃষ্টি পড়ে পাশের মোহাম্মদ তাজুল ইসলামদের। তার এ জমি তাদের দখলে নিতে বিভিন্ন ভাবে অপচেষ্টা চালিয়ে আসছে। এ ধারাবাহিকতায় প্রতিপক্ষ মোহাম্মদ তাজুল ইসলামরা সংঘবদ্ধ হয়ে ২০২৩ সালের ৬ জুন উল্লেখিত বিবাদীরা পূর্বপরিকল্পিত ভাবে আবদুল খালেক ও তার ছেলে এরশাদ মিয়ার সৃজিত বাগান থেকে জোর পূর্বক ১৪ বছর বয়সী ২ হাজার একাশিয়া গাছ ও ১৪ বছর বয়সী ১ হাজার ম্যালেরিয়া গাছ কেটে নিয়ে যায়। যার আনুমানিক মূল্য ৩০ লক্ষ টাকা। গাছ কাটার সময় বিবাদীদের বাধা প্রদান করলে এরশাদ মিয়া ও তার বাবা আবদুল খালেককে গালিগালাজ ও মারধরের চেষ্টা করেন। বেশি বাড়াবাড়ি করলে জানে মেরে ফেলার হুমকি প্রদর্শণও করেন মোহাম্মদ তাজুল ইসলামরা। পরে এ ঘটনায় বৃদ্ধ আবদুল খালেকের ছেলে এরশাদ মিয়া প্রতিকার চেয়ে মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, তাজুল ইসলামের ছেলে মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, জিয়াবুল হোসেন ও বেলাল হোসেন সহ অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে উপজেলা সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজদারী করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে আদালত বিবাদীদের বিরুদ্ধে সমন জারি করলে জামিনে মুক্তিপায় বিবাদীরা। জামিনে মুক্তির পর আদালতের জিআরও আনোয়ারুল ইসলাম ঘটনাস্থলে গিয়ে উভয় পক্ষকে বিরোধীয় জায়গায় কাজ করতে নিষেধ করেন। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বিবাদী মোহাম্মদ তাজুল ইসলামরা বিরোধীয় জায়গার উপর একটি মাটির ঘর ও একটি টিনের ঘর স্থাপনের কাজ অব্যাহত রেখেছেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা কারো জায়গায় যায়নি, আমরা আমাদের জায়গায় উপর আছি। এক প্রশ্নের জবাবে নিষেধাজ্ঞার পরও বিরোধীয় জায়গার উপর স্থাপনার কাজ করার বিষয়টি স্বীকার করেন মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
এদিকে গিলাতলী সমাজের সাবেক সর্দার আবদুর মন্নান জানান, আবদুল খালেক ও এরশাদ মিয়াদের জায়গা নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে উভয় পক্ষের সম্মতিক্রমে সামাজিকভাবে জায়গা পরিমাপ পরিচিহ্নিত করে পিলার স্থাপন করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এত বছর পর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামরা আবদুল খালেক ও এরশাদ মিয়ার সাথে জায়গা নিয়ে অযথা ঝামেলা করছেন।
তবে লামা কোর্টের জিআরও আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানায়, এরশাদ মিয়ার মামলার প্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশক্রমে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে বিরোধীয় জায়গায় কোন ধরণের স্থাপনা বা কাজ না করার জন্য নিষেধ করেছি। কোন পক্ষ যদি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কাজ করেন, তাহলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।