সেলিম উদ্দিন, (ঈদগাঁও) কক্সবাজার:
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার সর্বদক্ষিণে খুটাখালী ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নের প্রাণকেন্দ্রে ১৯৮০ সালের ১৪ এপ্রিল অনেকটা ক্যাডেট স্টাইলে “কিশলয়” অর্থ নতুন পাতার নামকরণে ব্যতিক্রমী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করেন আলহাজ্ব চৌধুরী মুহাম্মদ তৈয়ব। বর্তমানে এ প্রতিষ্টানের ৪৩ বছর পুর্ন হল। (১৯৮০-২০২৩)
কক্সবাজারের বটবৃক্ষ আলহাজ্ব চৌধুরী মুহাম্মদ তৈয়ব প্রকাশ তৈয়ব হুজুর। নামের আগে চৌধুরী শব্দ ব্যবহার যেমন ব্যাতিক্রমী, তেমনি কাজও ওনার সবসময় ব্যাতিক্রম।
তৈয়ব হুজুর শুধু একটি নাম নন, তিনি একটি প্রতিষ্ঠান ও মানুষ গড়ার কারিগর। একজন ব্যক্তি যে একটি প্রতিষ্ঠান, তার উজ্জ্বল প্রমাণ চৌধুরী মুহাম্মদ তৈয়ব। যে প্রতিষ্ঠানে ফুটেছে হাজারো ফুল। যে ফুলের সৌরভ শুধু দেশেই নয়, আজ পৃথিবী নামক গ্রহেও সুবাসিত। যার ত্যাগ আর কোরবানীর কারণে সেই ফুলগুলো আজ সর্বত্রই বিকশিত।
কিন্তু আমরা সেই বটবৃক্ষকে লালন করতে পারিনি বরং প্রতি মুহুর্তে আঘাতে আঘাতে সেই বৃক্ষের সুখের দিনগুলোকে আমরা কষ্টে ভরে দিয়েছি। সাহসী, কর্মট সেই মানুষটি বড় অসহায়, রোগে শোকে আজ সহ্যশায়ী। জীবনের লেনদেনে তিনি পরাজিত যোদ্ধা। আমরা পারেনি তাঁর সেই ত্যাগের কোরবানীর বিনিময় দিতে। জীবনের শেষ দিনগুলো তাঁর এভাবে যাবে তিনি কোনদিন কল্পনাও করেন নি। হয়ত এটিই তাঁর প্রাপ্য ছিল। এটা তাঁর সারা জীবনের ত্যাগের বিনিময় হয়ত। বড় দুঃখ হয় স্যারের জন্য। আসলে আমরা বড় অকৃতজ্ঞ। কিশলয়ের প্রত্যেকটা ছাত্র তৈয়ব হুজুরের নিকট ঋনী। তাঁর ঋণ কখনো শোধ করা যাবেনা।
প্রিয় হুজুর! আপনার কাছে ক্ষমা চাওয়া ছাড়া আর কোন গত্যন্তর নেই। বিশাল হৃদয়ের মহত্ব দিয়ে আপনি ক্ষমা করে দিয়েন। আমরা আপনার নিকট চুড়ান্তভাবে পরাজিত। আপনি সত্যিকার অর্থে জয়ী, ওরা সত্যিই পরাজিত।
বর্তমান সময়ে হুজুরের আবেদন সবার কাছে, যদি সম্ভব হয় আমরা যেন হুজুরের জানাযায় শরীক হই। যদি জানাযায় শরীক হতে না পারি তাহলে অন্তত হুজুরের ইহকালীন-পরকালীন মুক্তির জন্য দোয়া করি।
যকটুকু জেনেছি, মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও তিনি সম্পূর্ণ ক্যাডেট কলেজ এর মতো কড়া শাসন আর নিয়মানুবর্তিতার মধ্য দিয়ে গড়ে তোলেন কিশলয় নামক এ প্রতিষ্ঠান। যার সুখ্যাতি আশেপাশের এলাকা ছাড়িয়ে সারা বাংলাদেশে ব্যপ্তি লাভ করে। ছাত্র হিসেবে আমিও অন্য ক’জনের সাথে প্রত্যক্ষদর্শী।
তাঁর মাঝে শিক্ষক-গুরু দুটি শব্দই ওত:প্রোতভাবে জড়িত হলেও কিছু পার্থক্য বিদ্যমান। একজন শিক্ষক তার ছাত্রকে পিতার মতো নির্দেশ দেন। তিনি কিন্তু জীবনে পথ চলার উপযোগী বিভিন্ন উপদেশও দেন। তবে একজন গুরু শুধু নির্দেশক নন, তার শিষ্যকে পরিপূর্ণ রূপে লালন পালন করেন। তেমনই একজন আকাশের ধ্রুব তারার মত উজ্জ্বল চৌধুরী মুহাম্মদ তৈয়ব।
যার জ্ঞানপ্রদীপের আলোয় আলোকিত আজকের খুটাখালী। যুগে যুগে এ মানুষটির আসন সবসময়ই থেকেছে সবার উপরে। কারন তিনি একটু আলাদা, অন্য সবার থেকে ব্যতিক্রম। তিনি যায়গা করে নিয়েছেন হৃদয়ের মণিকোঠায়। তিনি একজন মানুষ, একজন শিক্ষাগুরু, সর্বোপরি বটবৃক্ষ। তিনি নিজের বিশ্বাস ও আদর্শের যায়গায় থেকেছেন সবসময় অবিচল।
মূলতঃ আদর্শবান নাগরিক গড়ে তোলার উদ্দেশ্যেই তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ‘কিশলয়’ নামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তৎকালীন সময়ে এ প্রতিষ্ঠান উপজেলা ও জেলায় একটি ভিন্ন ধারার সূচনা করে।
শিক্ষক হিসাবে তিনি যত কঠিন ছিলেন, তেমনি ছিলেন কোমল হৃদয়ের অধিকারীও। এক অদ্ভূত শক্তি ছিল তাঁর মাঝে, ছিল কারও চোখ বা চেহারা দেখেই তার ভেতরটা পড়ে ফেলার ক্ষমতা। তিনি কিশলয়কে তিলে তিলে নিজের যৌবনকালকে বিসর্জন দিয়ে দেশের শ্রেষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। এ কিশলয় খুটাখালীর অহংকার, কক্সবাজারের গৌরব তথা দেশের সম্পদ আর কিশলায়নরা দেশ-বিদেশের গুরুত্বপুর্ণ স্থানে।
নোটঃ কপি করলে অনন্ত সুত্র উল্লেখ করবেন।