আব্দুস সালাম, টেকনাফ |
কক্সবাজারের টেকনাফ প্রকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরা। একদিকে নাফনদী ও অন্যদিকে গাছগাছালিতে ভরা সবুজ -শ্যামল সরকারি বনাঞ্চল। সেই সরকারি বনাঞ্চল এখন অবৈধ দখলদারের কবলে চলে যাচ্ছে। বনের পাছপালা নিধন করে প্রতিনিয়ত একেরপর এক বাড়িঘর তৈরি করে বনের জায়গাতে বসতি গড়ে তুলছে অবৈধ দখলদাররা। প্রতিনিয়ত অবৈধ দখলদাররা সরকারি বন উজাড় করে বাড়ি-ঘর নির্মাণ করে বনাঞ্চাল দখল করলেও বনবিভাগের দায়িত্বরত কর্মকর্তা নিরব রয়েছে। সরকারি বন রক্ষায় একেবারে নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় বনবিভাগের কর্মকর্তারা।
এমনকি খোদ রেঞ্জ কর্মকর্তার সম্মতিতেই দখলদাররা গাছপালা নিধন করে অবৈধভাবে বনাঞ্চলে বাড়িঘর তৈরি করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বন কর্মকর্তাকে টাকা দিয়েই এসব দখলদাররা ঘর করছে বলে জানা গেছে। টাকা দিলে ঘর করার অনুমতি মেলে, না দিলে অভিযান চালায় সংশ্লিষ্ট বনের দায়িত্বশীলরা।
তবে রেঞ্জ কর্মকর্তা জহির উদ্দিন মিনার এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন।
জানা যায়,উপজেলার হোয়াইক্যং রেঞ্জের আওতাধীন হোয়াইক্যং বনকর্তাদের অফিস থেকে বাহারছড়া পর্যন্ত সড়কের দুইপাশে প্রায় বনের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে বাড়িঘর তৈরি করেছে বনখেকোরা। এমনকি বনের জায়গায় ছাদ জমানো বিল্ডিং ও ইট দিয়ে তৈরি সেমিপাকা ঘরেরও অভাব নেই। তবুও বনকর্তারা এসব দেখেও দেখে না।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে,হোয়াইক্যং রেঞ্জের আওতাধীন সরকারি বনে ছাদ জমানো বিল্ডিংসহ প্রায় পাঁচশো’র উপরে বাড়ি ঘর রয়েছে। তাঁদের প্রায়জন বনকর্তাদের ম্যানেজ করেই বনাঞ্চল দখল করে বাড়ি করছে বলে জানা গেছে। বনবিভাগের জায়গায় পল্লী বিদ্যুতের লাইনও দেয়া আছে। পল্লী বিদ্যুতের আলোতে আলোকিত করে অবৈধ দখলদাররা যেন স্বর্গে বসবাস করছে। সবকিছু দেখার পরেও বনবিভাগের দায়িত্বশীরা নিরব দর্শকের ভূমিকা রয়েছে।
বনের বসতিগড়া বুলবুল আক্তার নামে এক নারী বলেন,তাদের ঘর তৈরি করার সময় বনকর্তাকে ৩০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। পরে আবারও টাকা চাওয়ায় না দেওয়াতে ঘর ভেঙে দিয়েছে বনকর্তারা। ঘর ভাঙার সময় বাঁধা দেওয়ায় আসমা আক্তার (১৫) নামে তাঁর এক মেয়েকে মারধর করে ঘরের আসবাবপত্র গুড়িয়ে দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র (আইডি কার্ড) কেড়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেন। অবশ্যই পরে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রটি ফেরত দিয়েছে। ওই সময় রুবেল নামে একজনসহ আরও দুইজনের ঝুপড়ি ঘর ভেঙে দেয় বনকর্তারা। বনের জায়গায় শতশত ঘর রয়েছে,তাদের ঘর কেন ভাঙ্গা হচ্ছে না,এমনকি বিল্ডিং ঘরগুলোতে বনকর্তারা হাতই দিচ্ছে না। ভাঙলে সবার ঘরগুলো ভেঙে দেবে, না হয় একটাও ভাঙবে না। টাকা না দিলেই ঘর ভাঙে বলে অভিযোগ বুলবুল আক্তারের ।
নাম নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন,তার একটি দোকান করার সময় ২০ হাজার টাকা নিয়েছে বিটকর্মকর্তা নাছির উদ্দিন ও রেঞ্জার জহির উদ্দিন মিনার। তিনি আরও বলেন,বনের জায়গা দখল করে শতশত ঘর করতেছে,তাদেরকে কোথাও বাঁধা দেয় না, ঘর ভেঙে দেয় না, ঘর ভাঙে শুধুমাত্র টাকা না দিলে। বনকর্তাদের টাকা দিলে সব অবৈধ বসতিগুলো বৈধ হয়ে যায় বলে জানান ওই ব্যক্তি।
শুধুমাত্র বুলবুল আক্তাররা নয়,শতশত অবৈধ দখলদাররা একই কায়দায় টাকা দিয়েই বনের জায়গায় বসতি করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
তবে টাকার লেনদেন রেঞ্জ কর্মকর্তা নিজে না করে দালালের মাধ্যমে করায় বলে জানান তাঁরা।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে, টাকা নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে রেঞ্জ কর্মকর্তা জহির উদ্দিন মিনার বলেন, আমি কারো কাছ থেকে টাকা নেয়নি। মারধরও করা হয়নি। অবৈধ কোন বিল্ডিং থাকলে সেগুলি তিনি দেখবেন বলেও জানান।
টেকনাফ উপজেলার এসিএফ মনিরুল ইসলাম বলেন,আমার কাছে উনার একটা অভিযোগ আছে, ঐটা তদন্ত করছি এবং আপনার বিষয়টাও দেখবো। তদন্তে সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানান তিনি।