লামা প্রতিনিধি |
গত ২ আগস্ট বুধবার থেকে বান্দরবান জেলার লামা উপজেলায় শুরু হয় প্রবল বর্ষণ। আর এ টানা বর্ষণে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে একে একে তলিয়ে যেতে থাকে লামা পৌর শহরের নিচু এলাকায় বসবাসরত ঘরবাড়ি, অফিস আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও দোকানপাট। ডুবে যায় শহরের ৫০০ ব্যবসায়ীর দোকান সহ ৬ শতাধিক পরিবারের বসতঘর, সরকারী বেসরকারী অফিস-আদালত ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ৭ আগস্ট থেকে এ পাহাড়ি ঢল রুপ নেয় ভয়াবহতায়। এ সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ হয়ে আক্রান্তদের সাথে যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এতে দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায়। এর মধ্যে দ্রুত পানি ঘরে ঢুকে পড়ায় অনাহারে অর্ধাহাারে থাকা মানুষগুলো জান-মাল রক্ষায় ও একটু খাবার-বিশুদ্ধ পানির আশায় হাহাকার করছিল। চারপাশ পানিতে প্লাবিত হওয়ায় ঘরের ভিতর আটকা পড়েন অনেকেই। মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় স্বজনদের সাথে যোগাযোগও করতে পারছিল না তারা। তখন বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকট দেখা দেয় আক্রান্তদের মাঝে। ঠিক তখনি তুমুল বৃষ্টি উপেক্ষা করে বন্যায় আক্রান্তদের পাশে দাঁড়ান বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য, উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নব জাগরণ মহিলা সমিতির সভাপতি ফতেমা পারুল। তিনি ওইদিন সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত নৌকা ভাড়া করে ঢলে আক্রান্ত প্রত্যেকের ঘরে ঘরে গিয়ে খোঁজ খবর নেন। এ সময় ফাতেমা পারুল প্রায় সহ¯্রাধিক পানি বন্ধি মানুষকে উদ্ধার করে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যান। শুধু তায় নয়, এ সময় ব্যক্তিগত উদ্যোগে নিজ হাতে রান্না করে ঢলে আক্রান্তদের হাতে খিঁচুড়ি সহ বিশুদ্ধ পানি, মোমবাতি, স্যালাইন’সহ শুকনো খাবার তুলে দেন এ নেত্রী।
স্থানীয়লা জানান, ফাতেমা পারুল সর্বশেষ যে মহানুভবতা দেখিয়েছেন সেটি হলো-রাত ৯টার দিকে জীবন বাজি রেখে নৌকা নিয়ে চেয়ারম্যান পাড়াস্থ মীম ফিলিং স্টেশন সংলগ্ন একটি ঘরের ভিতর পানি বন্ধি প্রদীপ মাষ্টার পরিবারের সদস্যদেরকে ঘরের টিন কেটে উদ্ধার কাজ। অপরদিকে ফাতেমা পারুল পৌরসভা এলাকার বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ে ধসে ক্ষতিগ্রস্তদের দেখতে গিয়ে আক্রান্তদের নিরাপদে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দিক নির্দেশনা প্রদান করেন। আক্রান্ত রাতের বেলায় পানিবন্দি পরিবারকে উদ্ধার ও অনাহারে থাকা মানুষ গুলোর ঘরে খাবার তুলে দেওয়ায় ভূয়শী প্রশংসায় ভাসছেন ফাতেমা পারুল।
ঢলে আক্রান্ত প্রদীপ মাষ্টার, নুর ছালাম, ফাতেমা বেগম, নুর নাহার, মুজিব ও সেলিম সহ অনেকে বলেন, বন্যার সময় শুধু ফাতেমা আপা, কাউন্সিলর মোহাম্মদ রফিক ও মরিয়ম বেগমকেই কাছে পেয়েছি। অন্য কোন জনপ্রতিনিধিকে দুর্যোগের সময় দেখা যায়নি। একজন নারী হয়ে ফাতেমা পারুল যা করেছেন তাতে আমরা অনেক খুশি ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের পাশাপাশি তার দীর্ঘায়ু কামানা করছি। এ বিষয়ে ফাতেমা পারুল বলেন, একজন মানুষ হিসেবে বিপদে আপদে সকলের পাশে থাকাটাই মানবিকতা। যতটুক সম্ভব বিপদের সময় মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। যতদিন বেঁচে থাকবো সেবার মানসিকতা নিয়েই সকলের পাশে থাকবো।