লামা প্রতিনিধি |
পার্বত্য বান্দরবান জেলার লামা উপজেলায় সরকারি ও বেসরকারি মিলে ৪৪টি মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা রয়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ১৪ হাজার ৯৮৩জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। কিন্তু দীর্ঘ তিন বছর ধরে এ উপজেলায় নেই মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও সহকারী মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। আর একাডেমিক সুপার ভাইজার নেই প্রায় চার বছর ধরে। এখানে সহকারী মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও উচ্চমান সহকারী হিসেবে কখনো দেওয়া হয়নি কাউকে। অফিস সহকারী দিয়েই চলছে এ দপ্তর। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্মকর্তা কর্মচারীরা। ব্যাঘাত ঘটছে বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা পরিদর্শনসহ দাপ্তরিক কাজে। বিদ্যালয় পরিদর্শন সহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধান হচ্ছেনা এ সংকটের কারণে। এমনিতে পার্বত্য এলাকা সমতলের চেয়ে শিক্ষায় অনেক পিছিয়ে। তার উপর কর্মকর্তাগন না থাকায় উপজেলাজুড়ে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম, কমছে শিক্ষার মান। এ থেকে উত্তোরণে অতিদ্রুত শূন্য পদগুলো পূরণের জোর দাবী জানান শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্মচারীরা।
সূত্রে জানা যায়, লামা উপজেলার একটি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়নে এবতেদায়ী মাদ্রাসা রয়েছে ১১টি, কলেজ রয়েছে ৪টি, জুনিয়র স্কুল রয়েছে ১৩টি, মাধ্যমিক স্কুল রয়েছে ১২টি ও মাদ্রাসা রয়েছে ৪টি। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রয়েছে প্রায় ৩০০ শিক্ষক। মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সহ এ কার্যালয়ে পদ রয়েছে ৭টি। ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে হঠাৎ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. গাউছুল আজম বদলি হয়ে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ চলে যান। অন্য কোনো মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পদায়ন না হওয়ায় তখন থেকে পদটি চলতি বছরের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত শূন্য রয়েছে। এছাড়া সহকারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, একাডেমিক সুপার ভাইজার ও উচ্চমান সহকারী পদ পদ শূন্য রয়েছে। রয়েছে অফিস সহকারী, অফিস সহায়ক ও গার্ড। এদের দিয়েই কোন মতে চলছে মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যক্রম। বর্তমানে শূন্য মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন বান্দরবান জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ফরিদ উল আলম হোসাইনী। তিনিও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার পাশাপাশি নাইক্ষ্যংছড়ি, লামা ও রোয়াংছড়ি উপজেলার দায়িত্ব পাালন করছেন। এতে তাকেও রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে।
এদিকে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা না থাকার কারণে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান ও শিক্ষকরা। একজন শিক্ষা কর্মকর্তার অভাবে শিক্ষকরা মতামতও ভাগাভাগি করতে পারছেন না কারও সঙ্গে। অনেক সময় বিভিন্ন সমস্যার সমাধান খুঁজতে বাধ্য হয়ে যেতে হচ্ছে অফিস সহকারীর কাছে। কিন্তু তিনিই বা কতটুকু সমাধান দেবেন? সীমাবদ্ধতা থেকেই যায়। অপরদিকে উপজেলা মাসিক সমন্বয় সভায় মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার উপস্থিতি না থাকায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কাজে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছেনা বলে জানান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মোস্তফা জামাল।
আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু আহমেদ ইমতিয়াজ ও গজালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিশ^ নাথ দে জানিয়েছেন, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা না থাকায় দিনের কাজ দিনে না হয়ে, হচ্ছে এক সপ্তাহ পর। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোন কাজে স্বাক্ষর প্রয়োজন হলে ১০০ কিলোমিটার পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে বান্দরবান সদর শিক্ষা অফিসে যেতে হয়। এতে শ্রম, সময় ও অর্থ অপচয় হচ্ছে বলেও জানান তারা।
মাধমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ ৭টি পদের মধ্যে ৪টি পদ শূন্য থাকার সত্যতা নিশ্চিত করে লামা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী শীপক বড়–য়া বলেন, ‘এ উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে আমি, অফিস সহায়ক ও গার্ড ছাড়া অন্য কোনো কর্মকর্তা নেই তিন বছর ধরে। কাজকর্ম নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। অনেক সময় দাপ্তরিক কাজ কর্মে জটিলতা দেখা দেয়। এতে ব্যাহত হতে চলেছে উপজেলার প্রশাসনিক ও শিক্ষা কার্যক্রম। অতিদ্রুত শূন্য পদগুলো পূরণ করা দরকার।’
জানতে চাইলে এ বিষয়ে বান্দরবান জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ফরিদ উল আলম হোসাইনী জানায়, লামা উপজেলা সহ অন্য উপজেলার শূন্য পদগুলোর চাহিদাপত্র-সংবলিত চিঠি ইতোমধ্যে ডিজি অফিসে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া গত ২৭ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় সচিব মহোদয় বান্দরবান আসলে বিষয়টি মৌখিকভাবেও অবগত করেছি। আশা করছি খুব শিগ্গির একটা ব্যবস্থা হবে।